পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের বিক্ষুব্ধ সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগের জনসমাবেশে সাধারণ নারী-পুরুষ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর পুলিশের হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে ও নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে প্রতিবাদী সাংবাদিক সম্মেলন করেছে চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
 
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, গতকাল চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ এর দাবিতে শাহবাগে জনসমাবেশ আয়োজন করি। যেখানে প্রায় ৫০০ সাধারণ শিক্ষার্থী তথা চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়। জনসমাবেশের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা শাহবাগ চৌরাস্তায় অহিংসভাবে অবস্থান নেয়। পুলিশের সাথে নিয়মিত বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার পরেও এডিসি হারুনের নেতৃত্বে বর্বর হামলা ও নির্যাতন করা হয়। রাজপথে প্রকাশ্যে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা৷ পুরুষ পুলিশ সদস্যরা নারীদের উপর নির্যাতনও বাদ দেন নাই। আপনাদের নিকট আমরা কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে চাই-

সংবাদ সম্মেলনে তারা সাংবাদিকদের সামনে কিছু প্রশ্ন রাখেন। সেগুলো হলো- রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার পরও কেন এডিসি হারুন অতীতের ন্যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলে পড়লেন? এ বিষয়ে উপর মহল থেকে তিনি কি নির্দেশনা প্রাপ্ত হয়েছিলেন?

কোন বিধি বা আইন মোতাবেক পুরুষ পুলিশ সদস্য নারী শিক্ষার্থীদের উপর রাজপথে প্রকাশ্য নির্যাতন করেন? এটি কি নারী নির্যাতন নয়? অনেক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে পুলিশের টিম গতকাল পিটিয়েছেন। এই অধিকার তাদের কে দিয়েছে? সকল প্রকার হামলা ও নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সকল ধরনের অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গতকাল থেকে ভাইরাল হয়েছে। এই বিষয়ের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনাদের ভূমিকা কি হবে?

নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখের পরেও সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত সকল উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের নিকট আমরা করুণভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গত তিন মাসে অন্তত: ৫ (পাঁচ) বার দেখা করার অনুমতি চেয়ে আমরা ডকুমেন্ট দিয়েছি। যোগাযোগ করেছি জনাব ফজলে শামস্ পরশ (যুবলীগ চেয়ারম্যান), গাজী লিকু (এপিএস, পিএম)। আপনারা আমাদের দয়া করে বলতে পারেন কি করলে এদেশের সাড়ে পাঁচ লক্ষ উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের প্রতিনিধিরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেতে পারে?

আরও পড়ুন: পূর্ব শত্রুতার জেরে কুবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০

পূর্বের বিষয়বস্তু
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত যুব সমাজ বিগত এক যুগ ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের গঠনমূলক ও যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে। কোভিড-১৯ এর আঘাতে সকল বয়সী শিক্ষার্থীরা ২ বছরের অধিক সময় হারানোর পর বর্তমান যুব প্রজন্ম সাংবিধানিক অধিকার ‘সুযোগের সমতা’ বঞ্চিত হয়ে আবারও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট। এই প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি প্রদান করা হয়েছে; তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গাজি লিকুর মাধ্যমে ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আমরা যোগাযোগ করেছি স্মারকলিপি দিয়ে। 

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন; কয়েক মাসের মধ্যেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করা হবে। গত ২৫ আগস্ট আমরা ধানমন্ডি দলীয় কার্যালয়ে উনার সাথে স্বাক্ষাত করলে আবারও বিবেচনার আশ্বাস দেন। জনপ্রশাসন সম্পর্কিত পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ‘‘আমরা কমিটি থেকে তো বাস্তবতার নিরিখে বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নের জন্য অনেক আগেই সুপারিশ করেছি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী মহোদয় তো এই বিষয়ে অগ্রসর হন না’’। পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এর সাথে এই টিম দেখা করলে তিনি বলেন, ‘‘সরকার যদি নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বয়সসীমা বৃদ্ধি করে সেটাতে পিএসসির কোন আপত্তি নেই’’। 

সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উপলব্ধি প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার সাথে দেখা করে এই বিষয়টি উনাকে উপলব্ধি করানো যেতে পারে। কিন্তু আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেও সেই সুযোগ বা প্রবেশাধিকার পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ প্রাপ্তির জোরালো আবেদন জানাচ্ছি। সেই সাথে রাজপথের কর্মসূচীও করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এত বড় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারের উপেক্ষা স্বাভাবিকভাবেই এদেশের যুব প্রজন্মকে যারপরনাই হতাশ করছে। তাদের মধ্যে এই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে যে আমাদেরকে কি সরকারের কখনোই লাগবে না নাকি আমরা এই দেশের ভাড়াটে নাগরিক! 

২০১৮ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে আর একটি নির্বাচন আসন্ন এমন সময়েও উক্ত ওয়াদা বাস্তবায়ন করেনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করা এই দলটি। করোনা ২ বছরের অধিক সময় কেড়ে নেওয়ার পর বয়সসীমা হারিয়ে ফেলা চাকরীপ্রত্যাশী উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষাধিক। নিত্তনৈমিত্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে সারা বাংলাদেশজুড়ে। জাতীয় সংসদে এখন অবধি ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে যার সাম্প্রতিক উদাহরণ জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীর ব্যক্তব্য।

 বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়য়সীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত হয় এখন থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৯১ সালে, সেটাও অন্য সরকারের আমলে। তখন গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর আর এখন ৭৩। বিশ্বের ১৬২টি দেশে আমাদের চেয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অধিক। বাংলাদেশের জাতীয় যুবনীতিতে যুবকের সংজ্ঞায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়স বলা হচ্ছে আবার এখানে ৩০ বছরে আটকে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ। অথচ জনপ্রশাসন সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিতভাবে বয়সসীমা ৩৫ অনুমোদন করার জন্য সুপারিশ করেছেন

আমরা দেখি বিসিএস-এর চাকরিতে আবেদন করেন গড়ে চার লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ৷ কিন্তু সাধারণ পদ গড়ে ১,০০০-১,৫০০ মাত্র বা তারও কম ৷ তাহলে কেন বিসিএস কোয়াইলিফাই করার বয়সকে একটি নির্ধারক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে? এই যে বাকী ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের নাগরিক যাদের অন্যান্য সরকারি চাকরি পেলেও সেটা আকাঙ্খিত বলে মেনে নিবে তাদের কথাও তো ভাবতে হবে? বিসিএসের আবেদন প্রক্রিয়ায় ২১-৩০ বছরের সময়সীমা এমন একটি অযৌক্তিক ও অবাস্তব তথ্য উপস্থাপন করা হয়, অন্যান্য সরকারি চাকরির সার্কুলারে ১৮-৩০ বছরের বয়সসীমা উল্লেখ থাকতে দেখি। 

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ২১ বছর বয়সে কোন ধরণের শিক্ষার্থী কি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন, ১৮ বছরের কথা নাইবা বললাম?? এটা নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক ও তামাশা। শ্রদ্ধেয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী প্রায়শই গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার বয়স উপস্থাপন করেন শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য দিয়ে যেখানে বর্তমান বাংলাদেশের চাকরিপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন গড়ে ২৬ এর আশেপাশের বয়সে। সাত কলেজের মতো বিদ্যমান সেশনজট যেখানে আছে সেখানে আরও বেশী বয়স লেগে যাচ্ছে। করোনার বয়সজনিত ক্ষতি এই গ্রাফকে আরও ঊর্ধ্বগামী করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কোন দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত এই উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় - ভারত~ ৩৫/৪০ বছর (রাজ্যভেদে), নেপাল৩৫ বছর, ভুটান৩৫ বছর, মালদ্বীপ৪০ বছর, আফগানিস্তান৩৫ বছর, শ্রীলংকা~ ৩৫বছর, পাকিস্তান৩০ বছর, বাংলাদেশ৩০ বছর। সমগ্র বিশ্বে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অধিক যেখানে ৩৫ হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৫ থাকার পরও তারা করোনা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছেন; স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে। পাশের দেশ ভারতে আসাম, উড়িষ্যা, বিহার বিভিন্ন রাজ্যে করোনা ক্ষতিগ্রস্ততার দরুণ ৩৫ থেকে দুই, তিন বছর বৃদ্ধি করেছে। আর আমরা সেই ১৯৯১ সাল থেকে ৩১ বছর ধরে এক অচলায়তনের মধ্যে আছি।

 সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সোনিয়া চৌধুরী, সাজিদ সেতু, মো. তানভীর হোসেন, রেজোয়ানা সুলতানা, সানিয়া সুমি, মোজাম্মেল মিয়াজি, ইমতিয়াজ হোসেন, ইউসুফ জামিল, সুরাইয়া চৌধুরী, আসিফ হাসান, রাজ্জাক হাবিব, সঞ্জয় সরকার, মর্তুজা হাসান, শ্রীসান মিঠু, জহিরুল জনি, শাওন সোমা, তাসলিমা লিমা, আনোয়ার জনি, রাহান মাসুদ, কামরুল হাসান, মোশাররফ পাঠান, মুক্তা সুলতানা, সোহেল শেখ, মো. বোরহান প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ