রাজনীতি ঠেকাতে মরিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বলছে ছাত্রলীগ
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ দেয় না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগ ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করার পর শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এ পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানাতে মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, তারা অন্তত ৩৭টি ইউনিটে কমিটি দিয়েছেন। সামনে আরও কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থ খরচ করে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় চলে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। সেখানে ছাত্র রাজনীতি ঢুকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ দেশের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আগে থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি থাকলে শিক্ষার্থী কমার শংকা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। অপরদিকে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগে থাকেন।
এখন ছাত্রলীগ একের পর এক কমিটি ঘোষণা করায় সেই উদ্বেগ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষকে এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। সম্প্রতি বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মো. জাহিদুল হাসান শোভনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ রাহাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: সংঘর্ষে জড়ালো ছাত্রলীগ, মাশুল গুনবে শিক্ষার্থীরা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম এম শাহিদুল হাসান। ইমেইলের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার কোনও অনুমতি দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর।’
ক্যাম্পোসে ছাত্র রাজনীতিকে ‘না’ বলেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একটি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে যেকোনো রকম দলীয় সংগঠন চর্চা বা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেকোনো ধরনের সংগঠন গঠনের জন্য ব্যবস্থাপনার পূর্বানুমতি প্রয়োজন।
এআইইউবি ব্যবস্থাপনার অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বা বাইরে যেকোন কার্যকলাপ/প্রোগ্রামে এআইইউবি-এর নাম, লোগো বা অন্য কোনো প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ। আচরণবিধি লঙ্ঘন একটি বড় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থগিত বা বরখাস্ত করা হতে পারে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আগে থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। মারামারি, চাঁদাবাজিসহ অনেক কিছুতে জড়িয়ে পড়ে তারা। এখন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ছাত্র রাজনীতি অনেকেই ভালোভাবে নেন না। সে কারণে হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনীতির অনুমতি দিচ্ছে না।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দেওয়া এক ই-মেইলে বলেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের বাইরের ক্লাব বা সংস্থার সঙ্গে ব্যক্তিগত পছন্দের অধিভুক্তি বা সংগঠনগুলো অনুসরণ করার স্বাধীনতা আছে। তবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির লোগো যোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সাংগঠনিক অধিভুক্তি বা অন্য কার্যক্রম প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না।
আরো পড়ুন: ঢাবিতে বিএনপি সমর্থক একজন প্রভাষকও নেই
আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সম্প্রতি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে অভিভাবক ও ছাত্রদের উদ্বেগপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্ন পেয়েছে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি, উৎসাহ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধে নিবেদিত। নেতৃত্বের বিকাশের জন্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত করতে অনেকগুলো ক্লাব রয়েছে। একই সময়ে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ও কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না বিশ্ববিদ্যালয়।’
আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মূল্যবোধ অনুসারে বাইরের সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বা সমিতির ব্যক্তিগত স্বার্থ অনুসরণে স্বাধীন। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির লোগো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। সহ-সভাপতি সোহান খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগ একটি প্রগতিশীল সংগঠন। তাদের রাজনীতির সুযোগ না হলে অপরাজনীতি হওয়ার সুযোগ থাকবে। বুয়েট তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ছাত্রলীগ স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে সব স্থানে রাজনীতি করার অধিকার রাখে। ছাত্র রাজনীতির অনুমতি দেবেন না, এমন কথা তারা বলতে পারেন না। নৈতিকভাবে এটা ঠিক নয়।