২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মানা
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইন না মানায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিস)। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করতে হবে দেশের ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। তা না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (ইউজিসি)। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, যারা এবার নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হবে, তাদের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৫ (৭) ধারা কার্যকর করা হবে। ঐ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা উহার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখিবার স্বার্থে, চ্যান্সেলর, কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে, প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং এতদবিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
ধারার ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে প্রশাসক বসিয়ে দিতে পারবে। ট্রাস্টি বোর্ডের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হবে। এছাড়া আরো অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ১২ বছর পূর্ণ হলেও এখনও দেশের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরিভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়নি। কেউ আংশিকভাবে কেউবা নির্মাণাধীন কাজ দেখিয়ে বছরের পর বছর আউটার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে নানাভাবে আলটিমেটাম দিলেও এখনো তারা প্রধান ক্যাম্পাসে যায়নি। সে কারণে ইউজিসি থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করা হয়েছে।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শোকজের জবাবে নতুন করে আরও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের পর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অস্থায়ী সব ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অবৈধ করে বিবেচিত হবে। সেখানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বমি করায় চাকরি হারালেন, এখন চাকরির সঙ্গে খুঁজছেন ওষুধও
আলটিমেটামের আওতায় থাকা ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি কেনা থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। কভিডের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। এর ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানান্তর প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ চন্দ বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস ইস্যুতে আমরা দফায় দফায় সময় বাড়িয়েছি। কেউ কেউ স্থায়ী ক্যাম্পাস করেও নিজেদের অনীহা থেকে স্থানান্তর হচ্ছে না। তাদের বারবার সতর্ক করেছি। সব দিক বিবেচনা করে আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছি। যারা এই আইন মানবে না, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অবশিষ্ট ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ আংশিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। জমি কিনেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেয়নি।