শিক্ষককে ফেরাতে স্মারকলিপি, স্বাক্ষর তুলে নিতে ‘চাপ’

ড. রাহমান চৌধুরী
ড. রাহমান চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

শিক্ষককে নিজ বিভাগে ফেরাতে স্মারকলিপি প্রদান করায় শিক্ষার্থীদের ডেকে হয়রানি, ভয়ভীতি দেখানো এবং স্বাক্ষর তুলে নিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিভাগে ডেকে তাদের সাথে কথার বলার সময় এমন অবস্থার সম্মুখীন হন শিক্ষার্থীরা। বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে কথা বলার পূর্বে শিক্ষার্থীদের ফোন নিয়ে রুমে ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. রাহমান চৌধুরীকে গত বছরের ডিসেম্বরে ‘অজানা’ কারণে বাংলা বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুনরায় তাকে নিজ বিভাগে বহালের দাবিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্মারকলিপির বিষয়ে শিক্ষকরা যে আচরণ করেছেন, তা খুবই দু:খজনক। দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রদের থেকে স্বাক্ষর তুলে নেয়া হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার পূর্বে ফোন ছাড়া ঢুকতে বলা হয়েছে।

স্বাক্ষর তুলে নেয়ার বিষয়ে দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, আমরা রাহমান স্যারকে ফেরানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। এটা চাইতেই পারি। কিন্তু বিভাগ থেকে ডেকে বলেছে, চিঠির বিভিন্ন কথা বিভাগের বিরুদ্ধে ছিল। সেজন্য আমরা স্বাক্ষর তুলে নিয়েছি। চিঠির ভুল সংশোধন করে আবার স্মারকলিপি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা বিভাগের বিরুদ্ধে না, শুধু রাহমান স্যারকে ফেরত চেয়েছি।

বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল বলেন, বিভাগ থেকে এমনভাবে বলা হয়েছে, যেন আমরা বর্তমান চেয়ারম্যান স্যারকে চাই না। এটা সত্য নয়। তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। আজকে কতিপয় শিক্ষক আমাদের সাথে যা আচরণ করেছেন, তা কোনোভাবেই শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের পর্যায়ে পড়েনা।

শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর বিষয়ে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রনি আহম্মেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা কোনো শিক্ষককে চাইতেই পারে। এতে দোষের কিছু নাই। এতে তাদেরকে ডাকাই উচিত হয়নি। ভয়ভীতি বা ফোন নিয়ে প্রবেশ না করার যে বিষয়টি শোনা যাচ্ছে, তা সত্য হলে এটি জঘন্য কাজ করেছে। বর্তমান শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মো. আসিফ চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় প্রধান তাদের ৪/৫ জনের সাথে কথা বলেছে। শেষ বিকালে কথা হয়েছে। কি আলোচনা হয়েছে, আমি তা জানিনা। বিষয়টি আমি আজকে জেনেছি।

আরও পড়ুন: ফেসবুক পোস্টে পুলিশ যা করতে পারবেন, আর যা পারবেন না

সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আতাউর রহমানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। একইসাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আরো দুই জন শিক্ষককে ফোন করা হলে, তারা কেউই ফোনকল রিসিভ করেননি।

ঘটনার বিষয়ে ড. রাহমান চৌধুরী বলেন, আমার লড়াইটা আমি একাই লড়তে চেয়েছি। এ লড়াইয়ে কাউকে সম্পৃক্ত করতে চাইনি। এজন্য গত দুই মাস আমার সহকর্মী, শিক্ষক এবং খুব কাছের কারো রুমে যেয়েও বসিনি। আমি চাইনি আমাকে নিয়ে কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি হোক।

তিনি আরও বলেন, স্মারকলিপির বিষয়ে শুনেছি।শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আমি তাদের না করতে পারিনা। তাদের যৌক্তিক অধিকার আছে। তারা তাদের দাবি জানাতে পারে। ট্রাস্টি বোর্ড এবং উপাচার্য আছেন। আমি ন‍্যায়বিচার পাবো, তাদের প্রতি আমার সে ভরসা আছে। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় যে বিভাগে নিয়োগপত্র দিয়েছে, আমি সে বিভাগেই ফিরতে চাই।

উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি অবগত না। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।


সর্বশেষ সংবাদ