বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের বেতন ১৫ হাজার, প্রভাষকের ১০ হাজার টাকা!
ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষককে মাসে বেতন দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। এছাড়া দুজন অধ্যাপককে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠানটির কোনো চাকরিবিধি না থাকায় বেতন কাঠামোর এ পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, দেশের চাকরির বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। এজন্য বাধ্য হয়েই তারা চাকরিটি করছেন। এখানে কিছু সময় চাকরি করলে সে অভিজ্ঞতা সনদ নিয়ে অন্য কোথাও চাকরির আবেদন করা যাবে, সে আশায় চাকরিটি করছেন তারা।
আরও পড়ুন: ৫ সেপ্টেম্বর নয়, বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মরত পাঁচজন প্রভাষকের মধ্যে দুজনকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হচ্ছে। বাকি তিনজন পান মাসে ২০ হাজার টাকা হারে। শুধু প্রভাষক নয়; বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষকদেরও নিম্নহারে বেতন দেয়া হচ্ছে।
টাইমস ইউনিভার্সিটির গত কয়েক মাসের বেতন বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে দুজন অধ্যাপককে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। এ দুজন অধ্যাপক মাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন পান।
আরও পড়ুন: শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত: আন্তর্জাতিক মান নেই ৪৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে
এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক পদে বেতনভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন একজন। তার মাসিক বেতনের পরিমাণ ৫৫ হাজার টাকা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অফিশিয়ালদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর সিনিয়র লেকচারার পদে থাকা বাকি দুই শিক্ষক প্রতি মাসে ৩২ হাজার টাকা করে বেতন নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে পাঠদানের বাইরেও অনেক কাজ করতে হয়। এর মধ্যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা নেয়া, পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল তৈরি করাসহ বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কাজ ও দায়িত্বের অতিরিক্ত ভাতা দেয়া হচ্ছে। সেখানে আমাদের ১০-২০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে, এটা অমানবিক ও অসম্মানজনক।
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা রাবিতে সর্বনিম্ন
টাইমস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এএইচএম আক্তারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের প্রধান উৎস শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি। এখানে সব প্রোগ্রাম মিলে শিক্ষার্থী সংখ্যা দেড়শর মতো। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব নয়। তাই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুদান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় এর চেয়ে বেশি বেতন দেয়া সম্ভবও হয় না জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমার জানামতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। সেটিও খুব কম। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়াতে পারব।
আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি
তথ্যমতে, দেশে সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নির্ধারিত বেতন কাঠামো রয়েছে। যদিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোনো ধরনের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে প্রণয়ন করলেও জাতীয়ভাবে অনুসরণ করার মতো কোনো কাঠামো নেই।
তবে টাইমস ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর বিষয়ে অবগত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, ইউজিসির পক্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি প্রণয়ন ও অনুসরণে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যদিও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। আইন ও নির্দেশনা অনুসরণ না করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন।
শিক্ষকদের বেতনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিষয়টি শুধু অর্থসংস্থানের বিষয় নয়; এটা সামাজিক মর্যাদাও বটে। কিন্তু নিম্নমানের বেতন কাঠামো দিয়ে কি আমরা ভালো শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারব? আর বেতন কাঠামো ঠিক না করে তো একজন শিক্ষকের কাছ থেকে মানসম্মত পাঠদান আশা করাও সমীচীন নয়।