ভিসি ছাড়া ২০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টিতে মেয়াদ শেষ
দেশের ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি চলছে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনহীন উপাচার্য দিয়ে। আর ১৬টিতে উপাচার্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড প্রস্তাবিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চার বছরের জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। এ অবস্থায় উপাচার্যবিহীন এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসির সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭টি। এরমধ্যে একটিতে (ইবাইস ইউনির্ভাসিটি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর আরেকটি (কুইন্স ইউনির্ভাসিটি) সরকার কর্তৃক বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কয়েকটিতে একাডেমিক কার্যক্রম এখনও চালু হয়নি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এ তিন পদে নিয়োগ দেন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি। তবে প্রাথমিক কাজটি করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আসার পর তারাই সরকারের কাছে এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ তিনটি পদই পূরণ আছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা মাত্র ১৬টি। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনহীন উপাচার্য দিয়ে চলছে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়। আর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে আরও ২০টিতে। এর মধ্যে সম্প্রতি ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব হলো-রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি এবং জেড. এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউজিসি জানিয়েছে, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলে ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে লাল তারকা চিহ্নিত হবে। নতুন এই শর্তটি যুক্ত করে সম্প্রতি একটি স্মারক প্রকাশ করে তার অনুলিপি সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে ইউজিসি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, দেশে অনুমোদিত মোট ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টির পাশে লাল তারকা চিহ্নিত করা আছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের তালিকা আগে থেকে করে আসছে ইউজিসি। সম্প্রতি সেখানে একটি শর্ত সংযোজন করা হয়েছে। যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও ওয়েবসাইটে স্টার মার্ক দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এই তালিকা ইউজিসির ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট করা হয়। এখন থেকে ৬টি কারণে স্টার মার্ক দেওয়া হবে। পরবর্তীতে যাদের এসব শর্ত পূরণ হয় তাদের স্টার মার্ক উঠে যাবে। সম্প্রতি এরকম ২-৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার মার্ক উঠে গেছে। ইউজিসির ওয়েবসাইটে গেলে এসব তালিকা পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।
উপাচার্যবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয় মহামান্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার খর্ব করে আসছে। দেখা যায় কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন দিনই উপাচার্য নিয়োগ দেয় না। তারা ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালিয়ে নিয়ে যায়। একদিকে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধভাবে চলছে আর অন্যদিকে সেখানে যারা পড়াশোনা করবে তারাতো প্রতারিত হচ্ছে। তাই এখন থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে স্টার মার্ক দেওয়া হবে। আর আইনগত কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখবে।
উপাচার্যবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, গণবিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, রুপায়ন এ. কে. এম. শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বরিশাল, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইস্টা ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনা, চিটাগাং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।