করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে সফল ইউএপি
গত বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীরা যেন তাদের স্ব স্ব স্থান থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আর কিভাবে এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় এজন্য নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুরশিক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে থাকে।
আর এক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)’ বেশ সফলতার সাথে এক বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে গত বছরের এপ্রিল থেকেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এতে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতিও নিশ্চিত হয়। ক্লাশে যা পড়ানো হয় তা রেকর্ড করে পরে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। অনলাইনে শিক্ষা প্রদানের এই মডেল পরবর্তীতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণ করাও শুরু করে।
“দীর্ঘ দুই বছরের মত টানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ করোনা মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউএপি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যে যুগান্তকারী পদ্ধতি আনে তা সত্যিই অসাধারণ। আমরা নিয়মিত অনলাইনে ক্লাশ করেছি, যথা সময়ে এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছি এমনকি পরীক্ষাওতে অংশগ্রহণ করেছি। এভাবে মহামারীর এই সময়ে আমাদের দুইটা সেমিস্টারও শেষ হয়েছে।”
“তাছাড়া, করোনাকালীন এই সময়ে পুরো সেমিস্টারজুড়ে আমরা পেয়েছি ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফের সুযোগ। আর আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগ-সুবিধা আমরা পেয়েছি সেজন্য আমরা কোনভাবে চিন্তিত নই”। বৈশ্বিক এই আপদকালীন সময়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার কথা শুনাচ্ছিলেন ইউএপির আইন ও মানবাধিকার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলাম শোভন। শোভন এখন স্নাতকের শেষ সেমিস্টারের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।
শুধুমাত্র শোভন নয়, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে একই কথা জানা গেল। শিক্ষাথী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তাদের সন্তোষের কথা জানালেন। দেশের অন্যতম এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ৬ হাজারের মত শিক্ষাথী অনলাইন প্লাটফর্মে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অনলাইনে ক্লাশ, শতভাগ উপস্থিতি, অ্যাসাইনমেন্ট এবং পরীক্ষা নেওয়া সর্বোপরি যথা সময়ে সেমিস্টার শেষ করা এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য অুনপ্রেরণা।
অনলাইনে নিয়মিত ক্লাশ-পরীক্ষা হচ্ছে কিনা কতভাগ উপস্থিতি হচ্ছে সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত আছেন ইউএপির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: সুলতান মাহমুদ। অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা গত বছরের এপ্রিল থেকে অত্যন্ত সফলতার সাথে অনলাইন প্লাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি, প্রায় শতভাগ উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে পেরেছি যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে আশাব্যঞ্জক। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়কে মোটিভেট করেছি যাতে করে সকলের সহযোগিতায় অনলাইন এই শিক্ষা কার্যক্রম সফল হয়। প্রথমদিকে একটু কঠিন মনে হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক সকলের সহযোগিতায় আমরা সফল হয়েছি।
উপাচার্য আরও বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ২০ শতাংশ টিউশন ফির পাশাপাশি আমরা ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ দিয়েছি, যদিও ইউজিসির নির্দেশনা আছে ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়ানো। এছাড়া ইউএপিতে নানা ধরনের বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা শতভাগ পর্যন্ত টিউশন ফি পেয়ে থাকে, পাশাপাশি ভিসি স্পেশাল ওয়েভার, তাছাড়া, দুর্গম ও অনুন্নত এলাকার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পেয়ে থাকে আমাদের বিশ্ববিদ্যায়ে।
জানা যায়, করোনাকালে ইউএপির দুই সেমিস্টার শেষ হয়। এই দুই সেমিস্টারে মোট ফির ২০ শতাংশ মওকুফ করা হয়। এছাড়া আর্থিকভাবে কম অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে নানা রকম আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এমনকি যেসব শিক্ষার্থীরা পিতামাতা হারিয়েছেন তাদেরকে ভিসি স্পেশাল ওয়েভারের আওতায় এনে রেগুলার ফির সাথে বিলম্ব ফিও মওকুফ করা হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ করোনা শুরু হওয়ার সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক এই দুর্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা করে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র একাডেমিক কার্যক্রমে এই বিশ্ববিদ্যালয় সফল নয়, পাশাপামি সহশিক্ষা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের পাশাপাশি ক্লাব কর্মকান্ড পরিচালনা করছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালনায় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কর্মশালা, বির্তক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছে। এছাড়া, করোনাকালীন সময়ে সোশাল কাউন্সিলিয়ের ব্যবস্থা আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইউএপির ডিবেট ও পাবলিক স্পিকিং ক্লাবের সভাপতি ও আইন ও মানবাধিকার বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া নিশাত মীম বলেন, আমরা নবাগত শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্ক ও পাবলিক স্পিকিং শেখার উপর কর্মশালার আয়োজন করি। এছাড়া, ইউএপির প্রাক্তন উপাচার্য জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্মরণে আন্ত: বিভাগ বিতর্কের আয়োজন করি।
এছাড়া, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিয়ে-২০২১ এ বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে এবং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯তম স্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে, ইউএপি সম্প্রতি তুরস্কের ওনডোকুজ মায়িস বিশ্ববিদ্যালয়েস সাথে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রশাসনিক, একাডেমিক এবং গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং পাশাপাশি যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রামসহ শিক্ষামূলক, বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা।