বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপের প্রস্তাব কেন

২০১৫ সালের ভ্যাটের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন হয়
২০১৫ সালের ভ্যাটের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন হয়  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে শিক্ষাখাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব উৎকণ্ঠায় ফেলেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে আসছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রেসমি সাবা বলছেন, যদি এই কর আরোপ করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফির সাথে বাড়তি টাকা নেবে। অর্থাৎ চাপ পড়বে শিক্ষার্থীদের উপর।

তিনি বলেন, এই টাকা ভার্সিটি কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই নেবে। গতবার (২০১৫ সালে)যখন শিক্ষার্থীরা পেমেন্ট করতে গেছে তখন বুঝতে পেরেছে তার উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

রেসমি আরও বলেন, এখানে দুইটা বিষয় কনফিউজড করছে। একটা হল অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার কেন কর নেবে , আর যদি লাভজনক হয়ে থাকে তাহলে সরকার আগে কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। এদিকে বিদ্যমান ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান করযোগ্য নয়।

তাহলে সরকার কেন এই করের প্রস্তাব করেছে?

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব অধ্যাপক ফেরদৌস জামান বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে যে পার্থক্য সেখান থেকে ১৫ শতাংশ কর ধরলে পৌনে আট কোটি টাকার মত আসে।’

তিনি বলেন, টাকার অংকে এটা অল্প হলেও সার্বিক বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এই করের প্রস্তাব করা হয়েছে।

করোনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে রাজস্ব আয় করতে হবে। কোন উপায় নেই। মহামারির কারণে আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যেমন অনেক বেশি খরচ কিন্তু সে তুলনায় আমাদের আয় কম। ঘাটতি বাজেটটাই বেশি। তারপরেও খরচ করে যেতে হবে প্যানডামিকের জন্য।

সরকার এর আগে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে টানা কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলছেন, যদি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের খরচ চালিয়ে কিছু লভ্যাংশ থাকে সেই অর্থ তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজে লাগাবে। সেখানে কর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক।

বর্তমানে ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্টের অধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ট্যাক্স-ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]