বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর আরোপের প্রতিবাদ, মাঠে নামছে শিক্ষার্থীরা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার (০৫ জুন) বিকেলে ৩টায় চট্টগ্রামের প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আন্দোলননের সমন্বয়ক ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুর রূদ্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রূদ্র বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ করের এই বাড়তি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে আয় বা লাভের প্রশ্ন নেই। যদি আয় বা লাভ হয়ে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আইন মানছে না। রাষ্ট্রের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষা ব্যয় কমানো।
তিনি বলেন, কিন্তু তা না করে তারা করারোপ করে লুটতরাজ কায়েম করতে চায়। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যত ইচ্ছে টাকা নিয়ে ভাগাভাগি করে খেতে চায়। অথচ শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। এটি কোন পণ্য বা ব্যবসা নয়। একটি মৌলিক অধিকার নিয়ে এমন মুনাফালোভী কর প্রস্তাবনা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছে।
পূর্বের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করে রূদ্র বলেন, ২০১০ এবং ২০১৫ সালে একপ্রকার প্রস্তাবনা আনা হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলো সরকার। আমরা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, অবিলম্বে কর প্রস্তাবনা বাতিল করা না হলে শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।
পড়ুন: বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫% ভ্যাট দিতে হবে
কর্মসূচির কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবো। এর ধারাবাহিকায় শিক্ষার্থীরা আজ শনিবার (৫ জুন) বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানবন্ধনের আয়োজন করেছে। আমাদের দাবি একটাই, ‘শিক্ষায় আরোপিত কর প্রস্তাবনা বাতিল চাই’।
এ ছাড়া, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপ করে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করাসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।
সংগঠনটির মুখপাত্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী শাহ রেজোয়ান বলেন, বিগত ২০১০ এবং ২০১৫ সালে দেখেছেন বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্হার উপরে সরকারের যে অযৌক্তিক কর চাপানোর চেষ্টা তার বিরুদ্ধে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ সরব ছিলো এবং বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পণ্যে রূপান্তর করার যে অপচেষ্টা তা রুখে দিয়ে ২০১৫ সালে সরকারকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলাম। এবারও পূর্বের মতোই আমরা বলতে চাই শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় যেখানেই শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তর করার নূন্যতম চেষ্টা চলবে সেখানেই ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভূত আয়ে আয়কর আরোপের প্রস্তাবকে ট্রাস্ট আইনের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ কিংবা অনুদান না পাওয়ায় কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির উপর নির্ভর করতে হয়। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সরকার যেখানে মেধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বস্তরের শিক্ষা খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে থাকে সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উপর করারোপ করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করবে।