‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার অনুমোদন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ মে ২০২১, ০৮:১২ AM , আপডেট: ১২ মে ২০২১, ০৮:৩৫ AM
দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার স্থাপন বেসরকারিকরণ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)। মঙ্গলবার (১১ মে) এপিইউবির সভাপতি শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া দেশের ক্রমবিকাশমান উচ্চশিক্ষা খাতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদনে একক নীতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
এতে বলা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) কর্তৃক ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর পত্র দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪ পুনঃমূল্যায়ন তথা সংশোধন ব্যতিরেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হবে না মর্মে সমিতিকে আশ্বস্ত করা হয়। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনার আকর্ষিক অনুমোদন দেওয়া হয়। যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনা প্রজ্ঞাপন-২০১৪ এর বৈসাদৃশ্য এবং এর ফলে বৈষম্যগুলো হলো- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অধীন অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টারকে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর অধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী ‘কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতিত অন্য কোনো উদ্দেশে ব্যয় করা যাইবে না।’ অথচ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার প্রজ্ঞাপন ২০১৪ এর বিধি ৭ (ঝ) অনুযায়ী উদ্বৃত্ত অর্থ-সম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল গঠন, শিক্ষাথীদের জন্য কোটা ও বৃত্তি দেওয়া বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন বিধি থাকলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনায় এ ধরনের বিধিমালা রাখা হয়নি। বৈষম্যমূলক বিধির আওতায় সহজ শর্তে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমোদন কার্যকর হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার রোধের বিপরীতে নিন্মমানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সর্বস্ব ক্যাম্পাস পরিচালনার কারণে সনদ বাণিজ্যের আশঙ্কা রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিন দশক ধরে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে। বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষমতা ও মানের বিচারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি সহযোগিতা বাড়ানো হলে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হবে।
তারা বলছেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনায় বিভিন্ন বিধিমালা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অলাভজনক উচ্চশিক্ষার নীতির পরিপন্থী। সার্বিক বিবেচনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন স্থগিত করতে হবে। এ সময় উচ্চশিক্ষা খাতে বৈষম্যহীন একক নীতি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।