বেতন পেতে ফেসবুকে নিউজও শেয়ার করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের
শতভাগ বেতন পেতে শিক্ষকদের দিয়ে অভিনব কিছু কাজ করিয়ে নিচ্ছে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এইউবি)’। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কাজের বাইরে প্রতিমাসেই তাদেরকে নতুন কিছু কাজের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসব কাজ ঠিকভাবে করলেই কেবল বেতন মেলে শতভাগ।
অভিনব ওই কাজের তালিকায় ফেসবুকে মাসে অন্তত ২৫টি নিউজ ও বিজ্ঞাপন শেয়ার করা। এমনকি এইউবি শিক্ষক পরিচয়ে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশও রয়েছে এই তালিকায়।
এইউবির বিভিন্ন মাসের কার্যতালিকা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। ওই তালিকায় শিক্ষকদের নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে আরও অনেক ধরনের কাজের শর্ত দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তালিকায় দেখা যায়, ১ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ পরিকল্পনা ও লেকচার নোট আপলোডের জন্য ২০ শতাংশ মার্কিং রয়েছে। এছাড়া দেড় ঘন্টার অন্তত আটটি ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ উপস্থিতির জন্য ৩০ শতাংশ, শিডিউল অনুযায়ী উপস্থিতির জন্য ২০ শতাংশ, সিলভার জুবিলি উপলক্ষে সাকসেস স্টোরি নিয়ে একটি ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য ১০ শতাংশ, প্রচারণা কার্যক্রম সিলভার জুবিলির ইতিবাচক নিউজ শেয়ার ও অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীকে কাউন্সেলিংয়ের জন্য ১০ শতাংশ এবং পরিচয়সহ শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে নিবন্ধ প্রকাশের জন্য ১০ শতাংশ। এভাবে পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরে ১০০ শতাংশ হলেই দেওয়া হয় পূর্ণ বেতন।
অপরদিকে গত ডিসেম্বরের পারফরম্যান্স শিটে দেখা যায়, কোর্সের নথি আপলোডের জন্য ১০ শতাংশ, মার্কিংসহ সেমিস্টার ফাইনাল গ্রহণের জন্য ২৫ শতাংশ, দেড় ঘন্টার অন্তত চারটি ক্লাস ও ৭০ শতাংশ উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ৫ শতাংশ, শিডিউল অনুযায়ী সাপ্তাহিক উপস্থিতির জন্য ১০ শতাংশ, সিলভার জুবিলি সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য ১০ শতাংশ, বিভাগীয় কার্যক্রমের জন্য ১০ শতাংশ, অন্তত পাঁচটি বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার ও শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত কাজের জন্য ১০ শতাংশ, পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশের জন্য ১০ শতাংশ এবং সিলভার জুবিলি সম্পর্কে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীকে ইতিবাচক মতামত প্রকাশের জন্য ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর ধার্য করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, শিক্ষকদেরকে প্রতিমাসের শুরুতেই এভাবে পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর শিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আলোকে কাজ করলেই মাস শেষে মেলে বেতনের পুরোটা। অভিযোগ রয়েছে, কেউ কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হলে বেতন থেকে নির্ধারিত শতাংশ হারে কেটে নেওয়া হয়। এরপর যেটুকু বাকি থাকে, সেই বেতন পান শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষক বলেন, প্রতিমাসেই আমাদের এমন নতুন নতুন ইন্ডিকেটর দেয়া হয়। যে যতটুকু পূরণ করতে পারে, তাকে সেভাবেই বেতন দেয়া হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাজ করব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ধরনের ‘অভিনব কাজ’ এবং সেটির সঙ্গে বেতন কাটা না কাটার বিষয়টি কাম্য নয়। এটি কখনোই একটা প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এইউবি) এর ট্রেজারার আবুল কালাম আজাদ ও রেজিস্ট্রার মো. ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ জাফর সাদেক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের কারও সঙ্গে আমার আলাপ হয় না। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।