বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ এনে ফের সংবাদ সম্মেলন
কক্সবাজারের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চর দখলের মতো দখল করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষকদের পদোন্নতি, উপাচার্য নিয়োগসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা লায়ন মো. মুজিবুর রহমান।
আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাহবুবা সুলতানা। এ সময় প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের নয়জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবা সুলতানা বলেন, ২০১৩ সালে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি লায়ন মো. মুজিবুর রহমানের পরিবার ও অন্য ট্রাস্টিদের আর্থিক অনুদানে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এক টাকাও বিনিয়োগ না করা সত্ত্বেও শুধু ঘনিষ্ট আত্মীয়তার কারণে সালাহ উদ্দীন আহমদ সিআইপিকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত সালাহ উদ্দীন আহমদ এই দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ সাত বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ট্রাস্টি সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২০ মে তাঁকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমকে চেয়ারম্যান মনোনীত করেন। কিন্তু বোর্ড অব ট্রাস্টিজের এ সিদ্ধান্ত না মেনে সালাহ উদ্দীন আহমদ গত ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো. মুজিবুর রহমানের নামে মামলা করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সালাহ উদ্দীন আহমদ প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টিকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কলেজ শিক্ষক এ কে এম গিয়াস উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অ্যাডভাইজার, সরফরাজ আলীকে যোগ্যতা ছাড়াই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও তিনটি বিভাগের ডিন নিয়োগ, মাত্র পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এহসান হাবিবকে রেজিস্ট্রার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই ড. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়াকে উপাচার্য নিয়োগ করে চর দখলের মতো নানা অনিয়মে মেতে উঠেছেন সালাহ উদ্দীন আহমদ। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে সালাহ উদ্দীন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা পুনর্নির্ধারণের জন্য গত ৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদল পরিদর্শন শেষে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতেও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করেন। অথচ সালাহ উদ্দীন আহমদ গায়ের জোরে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দখলদারত্ব কায়েম করে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
মাহবুবা সুলতানা বলেন, সালাহ উদ্দীন আহমদ প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠানটি চর দখলের মতো দখল করে রেখেছেন। তাঁরা এই দখলদারত্ব অবসানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র কলাতলী চৌরাস্তা সংলগ্ন সৈকতের লাগোয়া স্থানে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হয়েছে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) মিলনায়তনে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে একই ধরনের অভিযোগের কথা জানায়। ওই সংবাদ সম্মেলনেও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাহবুবা সুলতানা। সে সময় ট্রাস্টের সেক্রেটারি ও সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো. মুজিবুর রহমান এবং ট্রাস্টি সদস্য আবদুস সবুর ও আবদুল মাবুদ উপস্থিত ছিলেন।