বিওটি সদস্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের অধীনে ২০১৩ সালে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে তথা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিবিআইইউ) অনুমোদন দেয় সরকার। প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর সম্প্রতি সালাহউদ্দিন আহমদ নামের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) একজন সদস্য সব প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। পেশীশক্তি ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করছেন। এমনকি এ জবরদখল ও লুটতরাজের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গাচ্ছে সালাহউদ্দিন আহমদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও প্রতিষ্ঠাকালীন প্রপোজাল বুক, ট্রাস্ট ডীড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়-বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন নথিপত্রে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
আজ বুধবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) মিলনায়তনে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাহবুবা সুলতানা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের সেক্রেটারি ও সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো. মুজিবুর রহমান, ট্রাস্টি সদস্য আবদুস সবুর ও ট্রাস্টি সদস্য আবদুল মাবুদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২ জুুন ট্রাস্টের সম্মানিত সেক্রেটারি ও সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো. মুজিবুর রহমানের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে ট্রাস্টের সদস্য ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দীন আহমদ বৈশ্বিক মহামারিজনিত লকডাউন চলাকালে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করেন। এরপর তিনি ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। অপকর্মের প্রতিবাদ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা পুনঃনির্ধারণের জন্য গত ৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর এ ধরনের অপচেষ্টা হাস্যকর ও ষড়যন্ত্রমূলক। যদিও প্রপোজাল বুক ও অনুমোদনপত্র অনুযায়ী সিবিআইইউ-এর প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মো. মুজিবুর রহমান।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা কে?
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনকালে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত পরিদর্শক দল কক্সবাজারে এসে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতেও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল মো. মুজিবুর রহমানের। তাঁর দেওয়া আর্থিক অনুদানসহ সবকিছুর বিশদ বিবরণ রয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিগত ১৫/০৯/২০১৩ইং তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এবং ৬/১০/২০১৩ইং তারিখ ইউজিসি কর্তৃক লায়ন মো. মুজিবুর রহমানকে উদ্যোক্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের চিঠি পাঠানো হয়। এরপর গত ৭ বছর যাবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে লায়ন মো. মুজিবুর রহমানকে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সম্বোধন করে বিভিন্ন সময়ে পত্র আদান-প্রদান হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তার বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হলেও সালাহউদ্দিন আহমদের হাস্যকর আবেদনের প্রেক্ষিতে অজানা কারণে ইউজিসিকে তদন্ত করার জন্য চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে চিঠির আলোকে ইউজিসি সদস্য ড. দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। ওই তদন্ত কমিটি আমাদের কারো সাক্ষাৎকার না নিয়ে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে। বিষয়টি জানতে পেরে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে ওই তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তাদের তদন্ত কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। সালাহ উদ্দীন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অবদান না রেখে তিনটি মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে কতিপয় দৃস্কৃতিকারীর সহযোগিতায় দীর্ঘ ৭ বছর পর নতুন করে উদ্যোক্তা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি রহস্যজনক আবেদন পত্র জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লায়ন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি প্রপোজাল বুক জমা দিতে হয়। একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হয়। প্রপোজাল বুকে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও জীবনবৃত্তান্ত বিস্তারিত দেয়া থাকে। ডীড অব ট্রাস্টেও উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতার নাম স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সেটিও আমি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন দেয়া ইউজিসির পরির্দশন প্রতিবেদনে এগুলোর প্রমাণ রয়েছে। গত সাত বছরে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সব চিঠি উদ্যোক্তা হিসেবে আমার নামেই এসেছে। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো বিতের্কের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা। সালাহউদ্দিন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি করায় তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি তার আগ্রহের কারণেই ট্রাস্টের চেয়ারম্যানও করা হয়। তবে তিনি অর্থ সংস্থান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করায় ট্রাস্টিদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে। এখন তিনি সেটা মেনে নিতে না পেরে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সাত বছর পর এর উদ্যোক্তা পুনরায় নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন, যা হাস্যকর। এমনকি ট্রাস্টিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরও নির্লজ্জের মতো সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজেকে বিওটি চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ভূয়া প্রতিষ্ঠাতা দাবিদার সালাহউদ্দিন আহমেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউজিসি এ বিষয়ে তদন্ত করছে। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো- প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন করে নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে কি না। অতএব ইউজিসির মাধ্যমে দখলদার সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।