স্বপ্ন যাদের রোবোটিক্স নিয়ে

ঢাকা বাইরে একটি স্কুলে দলটির প্রদর্শনী দেখছেন শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বাইরে একটি স্কুলে দলটির প্রদর্শনী দেখছেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এইউএসটি) একদল শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তুলেছেন ‘থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুল’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। তাদের মতে, বাংলাদেশ রাতারাতি এই সেক্টরে শক্তিশালী বা উন্নত হতে পারবে না। তাই টেকনোলজিগত জ্ঞানসমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী পাইপলাইন গড়ে তুলতে তাদের এই উদ্যোগ। এটির মূল চালিকাশক্তি হবে শিক্ষার্থীরা। আর সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছেন এ প্ল্যাটফর্ম। তাদেরর আগ্রহ, চিন্তা কিংবা স্বপ্ন পুরোটাই রোবটকে ঘিরে। মূলত তারা রোবট বানায়, রোবট শেখায়। তারা কাজ করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও কিছু সভা-সেমিনারের আয়োজন করছে তারা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোবোটিক্স কি এবং কিভাবে শুরু করতে হয় সেটি সম্পর্কে তারা বিস্তারিত বলে বিভিন্ন রোবোটিক্স কর্মশালার মাধ্যমে। তারা জেলায় জেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মশালা আয়োজন করে যেখানে তারা শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনা দেয় এবং বিভিন্ন ধরণের রোবোটিক্স প্রজেক্ট দেখায় যেগুলো তাদের বানানো, যাতে করে তাদের মাঝে রোবোটিক্স এর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। কারণ রোবোটিক্স প্রজেক্টগুলো না দেখলে শিক্ষার্থীরা রোবটিক্স সম্পর্কে আগ্রহ পাবে না। রোবোটিক্স প্রজেক্টগুলো দেখলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নতুন রোবোটিক্স অথবা আইওটি প্রজেক্ট বানানোর মন-মানসিকতা তৈরি হচ্ছে ।

থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসা (সিইও) এবং ফাউন্ডার মোহসী হক বলেন, ছোট-বড় সবারই আগ্রহ আছে রোবট সম্পর্কে জানান। রোবট কী এটা আর জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, চাইলেই যে কেউ বানাতে পারবে রোবট-আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের বানানো রোবোটিক্স প্রজেক্ট গুলোস্কুলের ছাত্র-ছাত্রী দের অনেক মুগ্ধ করছে, এতে তারা রোবোটিক্স এর ব্যাপারে আগ্রহ হচ্ছে। আর সেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা এই ধরনের রোবোটিক্স প্রজেক্ট বানাতে চাচ্ছে আমরা তাঁদের সর্বাত্তক সাহায্য করছি।

থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুলের চিফ টেকনোলজি অফিসার এবং ফাউন্ডার সহল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকগুলো রোবোটিক্স প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ান এবং রানার্স আপ হয়েছি। তাই রোবোটিক্স প্রতিযোগিতাগুলোয় কিভাবে রোবোটিক্স প্রজেক্টের কাজ করতে হয় সেইগুলোর সম্পর্কে আমরা ছাত্র-ছাতত্রীদের ধারণা দিচ্ছি আমাদের এক্সপেরিয়েন্স থেকে।

উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল পর্যায় থেকেই বিভিন্ন টেকনোলজি তৈরি এবং ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করছে। এতে সেই দেশগুলোতে টেকনোলজির ক্ষেত্রে অভূতপুর্ব উন্নতি সাধন হচ্ছে, যার ফলে সেই দেশগুলোতে বিভিন্ন টেক জাইন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুল মনে করে, যদি দেশে বোস্টন ডাইনামিক্স বা ইয়াস্কাওয়া এর মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই সেটা এই মুহুর্তে সম্ভব না। কারণ তাহলে তাদের মতে বেশিরভাগ শ্রমিক বাইরে থেকে আনতে হবে। এর মূল কারণ টেকনোলজি বিষয়ক সঠিক জ্ঞানের অভাব।

এই সমস্যার সমাধান করতে হলে পুরো একটি প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর মূলত সেই কাজটি করছে তাদের থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুল। একটা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীও রোবোটিক্স নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে এবং এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়েই যে শুরু করতে হয় এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা তাদের মধ্য থেকে দূর করার চেষ্টা করছে। স্কুল পর্যায় থেকে যে এটা করা সম্ভব সেটার বিশ্বাস তারা তাদেরকে দিচ্ছে।

সেই জন্যই থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুল তাদের জন্য একটা সঠিক গাইডলাইন তৈরি করছে এবং তাদের অবহিত করছে যে সে কিভাবে আগালে রোবোটিক্স জগতে কাজ শুরু করতে পারবে; কিভাবে এটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে।

তারা রোবোটিক্স এর মূল বিষয়গুলো, যেমন আর্ডুইনো, সেন্সর, রোবোটিক্স মোটর, রোবোটিক্স আর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে তাদেরকে বিস্তারিত বলে এবং রোবটিক্স জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা যেনো এই ধরণের জিনিসপত্র ব্যবহার করে তাদের জেলা পর্যায় বা স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলাগুলোতে অংশগ্রহণ করে সেই বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছে। তারা ব্যাপারটা চেইন বিক্রিয়ার মত করছে।

অর্থ্যাৎ তারা প্রতি জেলা থেকে কিছু ভাল সংখ্যক ছেলে-মেয়েকে বের করে আনছে যারা এই রোবোটিক্সে ব্যাপারটাতে আগ্রহী এবং ভাল কাজ করার সক্ষমতা আছে। তারা একটা প্রপার ট্রেইনিং দেওয়ার চেষ্টা করছে যেন তারা পরবর্তীতে নিজ নিজ জেলায় ইন্ডিভিডুয়াল ট্রেইনার হয়ে উঠতে পারে। তারা ইতিমিধ্যে নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বেশ কয়েক জায়গার স্কুল/কলেজে তারা রোবোটিক্স এর জিনিস বাচ্চাদের শিখাচ্ছে।

তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইভেন্টে তারা অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের রোবোটিক্স এর প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছে। তাঁদের কার্যক্রম এর অন্য একটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা রোবোটিক্স এর একটা R&D (রিসার্চ & ডেভেলপমেন্ট) দল তৈরি করছে, যেটার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের আইওটি এবং রোবোটিক্স প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবো যেখানে মূলৎ কাজ করবে দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা। আর এই অভিজ্ঞতা তাদের মাঝে দেশের বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে অংশগ্রহণের সাহস জোগাবে।

থ্রাস্ট রোবোটিক্স স্কুল দলের সদস্যরা: সিইও মোহসীন হক ছাড়াও আরও রয়েছেন  অর্ঘ্য অর্পণ, সহল ইসলাম, ফরহাদ উজ জামান, তামজীদ ইসলাম, নিয়াজ মাহমুদ সায়েম, হুমায়রা আলম তাবাসসুম, আশফাকুর রহমান ফাহিম, রাকিব হোসেন রিফাত, ফাহিম খান, আরমান সরকার, সাইমুম ইসলাম, দিব্য নাথ ও মো. রিদওয়ান হাসান। সদস্যদের মধ্যে নিয়াজ মাহমুদ সায়েম ও সহল ইসলাম পড়ছেন তড়িৎ প্রকৌশলে আর বাকিরা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে।


সর্বশেষ সংবাদ