পুরোনোরাই অস্তিত্ব সংকটে, তবুও নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়?
নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেই বললেই চলে। পুরোনো শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সেমিস্টার চালিয়ে নিতে পারছে না। আবার যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। করোনা মহামারির প্রভাবে এমন দুরবস্থায় কাটছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। যদিও এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় চলছে। অন্তত দুই ডজন আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন করতে হলে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকা, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ২১ অথবা কমপক্ষে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করাসহ ২৩টি শর্ত পূরণ করতে হয়।
ইউজিসি বলছে, আগে নতুন অনুমোদন পাওয়া ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও শিক্ষা কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সরকার ছয় দফা সময় দিলেও এখন পর্যন্ত ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। ১১টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সরকারের কাছে নতুন করে সময় চেয়েছে। শিক্ষা বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এসব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কভিড-১৯ এর প্রভাব। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি বড় অংশ নিয়মিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতনও দিতে পারছে না।
যদিও এসব সংকটের মধ্যেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের অনুমোদিন নিতে চলছে তোড়জোড়। নেপথ্যে রয়েছেন সরকারদলীয় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রস্তাবিত এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রস্তাব বিষয়ে ইউজিসির মতামত চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির পরিদর্শক দল এসব আবেদনের বিষয়ে তাদের মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, নতুন আবেদনে উল্লিখিত তথ্যাবলি সরেজমিনে যাচাই করতে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা সরেজমিন গিয়ে আবেদন যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এগুলো অনুমোদন পাবে কি পাবে না, তা সরকারের সিদ্ধান্ত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির দেওয়া পরিদর্শন প্রতিবেদনের মধ্যে কয়েকটির বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেওয়া হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কুষ্টিয়া, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও রাজধানীর মিরপুরে স্থাপনের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও প্রবাসী কয়েকজন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক হয়ে গেছে। নতুন আর প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তা নতুন করে ভাবা দরকার। একটা হোক আর ১০টা হোক, যাদের তা চালানোর যোগ্যতা আছে- তাদেরই দেওয়া হোক। যোগ্য শিক্ষক সেখানে আছে কিনা তা সবার আগে দেখতে হবে।