কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...
- সাদিয়া তানজিলা, ডিআইইউ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৮:১৫ PM , আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০, ০৫:২৪ PM
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চোখেই সবচেয়ে সুন্দর প্রাঙ্গণ তাদের নিজেদের বিদ্যাপীঠ। তা যদি টিনের চালা কিংবা ইট পাথরের শক্ত দালান হোক; তাও তার কাছে ভালোবাসার স্থান, শান্তির স্থান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ক্যান্টিনের গোল টেবিলে কফির আড্ডায় কতনা সুরের মিলন— সবই যেন দমকা হাওয়ায় স্থির হয়ে গেছে ।
গল্পটা ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি—ডিআইইউ-এর। ক’দিন আগেও শত শত হাঁসির ঝলকানিতে মুখরিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়, আজ সে ক্যাম্পাস যেন প্রাণহীন মূর্তির মত ঠাঁয় অবস্থান করছে ।
ক’মাস আগেও করোনা নামক ক্ষুদ্র ভাইরাসের তান্ডব যখন পৃথিবীর বুকে হানার শক্তি পাইনি, কত-শত আড্ডায় মুখরিত ছিল ডিআইইউর ধারে স্থান পাওয়া সেই ছোট্ট টিনের চায়ের দোকানটা। কম্পিউটার ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রতিদিনের ক্লাস সব কিছুর ফাঁকে বন্ধু মহলের আড্ডার দিনগুলো যেন স্মৃতির পাতায় আজ শুধুই এক গল্প হয়ে রয়েছে।
ক’দিন আগেও অডিটোরিয়াম থেকে ভেসে আসত শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের কবিতার সুর। নাট্য দলের নাটকের সংলাপের সুর। বিতর্ক মঞ্চে বিতার্কিকদের ঝাঁঝাল বক্তব্য। ক্লাস থেকে মাঠ, দালান থেকে দুর্বা ঘাস, নিয়ম থেকে অনিয়ম তুলে ধরাই ছিল সাংবাদিক সমিতির প্রতিদিনকার রুটিন।
হঠাৎ এক কালো থাবা যেন সব সুখস্মৃতি ছিনিয়ে নিয়ে গেলো । বন্ধ হয়ে গেলো শিক্ষার্থীদের পদাচরণ। যদিও ক্যাম্পাস ছাদের সেই রক্ত জবা ফুল ফোঁটা আজও ফুটছে। হয়ত কতো ফুল ঝরে আবার নতুন কলিতে ভরে উঠেছে নাম না জানা গাছগুলোয়।
ক্যাম্পাস মাঠে আর দেখা যায়না ব্যাট হাতের সেই লাল সবুজ জার্সির ছেলেটিকে, স্বপ্ন যে তার মাশরাফির মত ক্রিকেটার হবে। বন্ধু মহলে গিটার বাজিয়ে আর গাওয়া হয়না মান্নাদের সেই বিখ্যাত গানটি-
‘‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই,আজ আর নেই,
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই,আজ আর নেই’’।
ক’দিন আগেও ক্যাম্পাসের সেই নামাজ ঘর কতো মুসল্লিতে ভর্তি ছিল, সারাদিনের সকল ক্লান্তি যেনো মুছে যেত অযুর সেই পবিত্র পানিতে। জামাত করে নামাজের কাতারে সবাই যেনো এক স্রষ্টার সেবাই মগ্ন ছিল ।
হয়ত ফাঁকা পড়ে আছে চিরচেনা সেই বাদাম বিক্রির জায়গাটাও। কিশোর ছেলে-মেয়েগুলো প্রায় প্রতিদিন আসতো তাদের ছোট্ট দু'হাত ভর্তি গোলাপ বা বেলি ফুলের মালা নিয়ে। পুরো ক্যাম্পাস হেঁটে হেঁটে বিক্রি করতো দু’বেলা দুমুঠো আহার জোগাতে।
আচ্ছা শূন্য ক্যাম্পাসে কি এখনও ওরা আসে? সবসময় ব্যস্ত থাকা সিআর কি এখনো আগের মতো ব্যস্ত থাকে? আচ্ছা যে ছেলেটা প্রতিদিন সকালের ক্লাস মিস করতো আর ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতো; সে এখন অবশ্যই ঘুমানোর অনেক সময় পাচ্ছে! নাকি নতুন কোনো মাঠ, নতুন কোনো ঘাটের সন্ধান পেয়েছে? আচ্ছা ক্লাসের ফার্স্ট বয় কি এখনো রাত জেগে বইয়ের মাঝে মুখ গুজে থাকে?
আবার কবে ফেরা হবে সেই চিরচেনা সবুজ ক্যাম্পাসে। আবার কবে শুনতে পাবো পাখিদের সেই কিচিরমিচির গান। আবার কবে আড্ডায় জমে উঠবে ক্যান্টিনের সেই গোল টেবিল। আবার কবে অডিটরে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের গান কিংবা বিতর্ক মঞ্চের যুক্তিনির্ভর বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে ল্যাঙ মেরে ফেলে দেয়ার শব্দ শুনবো। আবার কবে সাংবাদিক সমিতির সেই তরুণ সাংবাদিকরা মাঠে বিচরণ করবে, পক্ষ-বিপক্ষকে উপেক্ষা করে নিষ্ঠার সাথে লড়বে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে।
আতঙ্কের মাঝে এই স্বপ্নের আলোয় আজও দিন গুণছে ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হাজারো শিক্ষার্থী।