১৭ জুলাই ২০২০, ১৫:৩২

সুস্থ পৃথিবীতে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে চাই

  © টিডিসি ফটো

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা হয়েছেন ঘরবন্দী। ঘরবন্দী করোনায় সকলেরই নানান স্মৃতি। নিত্য নতুন অনুভূতি আর অভ্যাস। পুরনো সব অভ্যাস বদলেছে পৃথিবীর এই দুঃসময়ে এসে; সবার মাঝেই বৈরিতা।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী পার্টটাইম জব করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে থাকে। পরিবারকেও অনেকেই সাহায্য করে। কিন্তু করোনার দীর্ঘ এই বন্ধে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা সংকট শিক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে, ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানাচ্ছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ডিআইইউ‌ প্রতিনিধি সাদিয়া তানজিলা

ডিআইইউ এর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো: ওমর ফারুক জানান, আমি নিজে একজন শিক্ষার্থী, আবার শিক্ষকও। আমি টিউশনিও করাচ্ছি, আবার নিজের একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চালাচ্ছি। আমার যেহেতু ইনকাম সোর্স দুটো এবং দুটোই শিক্ষা রিলেটেড তাই সে হিসেবে অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। কোচিং বন্ধ থেকেও বাসাভাড়া দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোচিংয়ে আমার প্রায় ২৬ জন টিচার, ওদেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা বারবার ফোন করছে কোচিং চালু করার জন্য। ওরাও বাসায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে, সাথে অভিভাবকদের চাপ তো আছেই। কিন্তু সরকারি নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ কই? এদিকে নিজের টিউশন ফি ও দিতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে পুরো থমকে আছে সবকিছু।

ডিআইইউ এর ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র আল মামুন সোহাগ জানান, করোনা যেনো জীবন থেকে কিছু মূল্যবান সময়কে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যে সময়টা আমারাদের ক্যারিয়ার গঠনের সে সময়ে এক ভয়াবহ আতংক নিয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি ফার্মেসি নিয়ে পড়ছি, নিজের পড়াশুনার খরচ নিজে চালাচ্ছি। বারডেম জেনারেল হসপিটালে সহকারী ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করছি। ভার্সিটি চলাকালীন সময়ে দিনে ক্লাস করতাম আর রাতে নাইট ডিউটি করতাম সন্ধ্যা ৮টা হতে সকাল ৮টা পর্যন্ত। বর্তমানে দেশের অবস্থা আর নিজের পড়াশুনার খরচ এর জন্য এখন ওভারটাইম ডিউটি করতে হচ্ছে। গত ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি, জানিনা এইবারও যেতে পারবো কিনা। করোনা আমাদের জীবনকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ফেলে দিয়েছে ।

ডিআইইউ এর বিবিএ ছাত্র সৌরভ ইসলাম সাগর জানান, করোনায় শিক্ষা জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে তা পরবর্তী চাকুরী জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে মাঝে মাঝে খুব চিন্তা হয়। আমি পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের পড়াশুনা আর হাত খরচ এর জন্য একটা কল সেন্টারে কাজ করতাম। করোনা দুর্যোগে মাঝেও নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এখনও কাজ করতে হচ্ছে। জানিনা আবার কবে এক সুস্থ পৃথিবীতে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারবো ।

ডিআইইউ এর ফার্মেসি বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী তাছলিমা রূপ পুতুল। তিনি জানান, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, ভালো মতো আনন্দে দিন কাটছিলো। ক্যাম্পাসের নির্মল বাতাসে আমরা ছিলাম মুখরিত। ক্লাস করা, সারা ক্যাস্পাস হই হই করে চষে বেড়ানো, ক্যান্টিনে বসে আড্ডা, গান কত আমেজ। সব ভেঙে চুরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরলো।

তিনি বলেন, হঠাৎ নিয়ম-কানুন, হাসি-আনন্দ ভেঙে দেশে ঢুকে পরলো করোনার ভয়াবহতা। মোটামুটি কয়েকটা টিউশনি করাতাম, যদিও সব খরচ নিজে একা বহন করতে হয়নি তবুও যতটা সম্ভব ইনকাম করে পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস যাবৎ ঘরে বসা।

তিনি আরও বলেন, ঘরে বসে সব থেমে থাকলেও খরচ থেমে নেই, খাওয়া-দাওয়া সব বাদই দিলাম, কিন্তু হোস্টেল ফি, সেমিস্টার ফিতো চলমান। সাথে যুক্ত হয়েছে নেট কিনে অনলাইন ক্লাসের আলাদা খরচ। বাবা-মায়ের কথা ভাবি, কষ্ট হয়। জানি না কতদিন এভাবে চলতে পারবো। তবে যত দিন যাচ্ছে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।