২৩ বছরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়
সাভারের বংশী নদীর তীরে গড়ে উঠা গ্রাম শহরের মিশ্র পরিবেশে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন গড়ার জায়গা। প্রতিবছর দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা শিক্ষার্থীরা এই জায়গাটি বেছে নিয়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের কান্ডারী হিসেবে। কেননা এই জায়াটিতেই সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বহু স্বপ্নচারীর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নের ঠিকানা।
মানুষ গড়ার অভিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তৈরি ৩২ একরের সবুজে ঘেরা নান্দনিক ক্যাম্পাসটি গুটি গুটি পায়ে ২২ বছর শেষ করে আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) ২৩ বছরে পা দিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটি প্রাচ্যের কিংবা উপকূলীয় অক্সফোর্ড নয়, এটির নামের সাথে জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তৈরি একটি অলাভজনক এবং ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠানের তকমা। বলছি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।
১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির শুরুটা সমাজ উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সচেতনা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে হলেও ধীরে ধীরে অনেক কিছুতেই সমৃদ্ধি লাভ করেছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এটি এখন ব্যতিক্রমধর্মী এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি কুড়াচ্ছে।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২৩টি বছর পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে রয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস আর এই ইতিহাসের নির্মাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা। যার নামের সঙ্গে মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধের অভূতপূর্ব সংগ্রামী অধ্যায়।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় একজন স্বাস্থ্য হিরো, নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আদর্শে গড়া প্রতিষ্ঠান বলেই হয়তো অলাভজনক ও ব্যতিক্রমী হিসেবে প্রতিষ্ঠানর মাত্র ২২ বছরে এতদূর এগিয়ে গেছে। কেননা তাঁর প্রতিষ্ঠানটিতে নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানের জন্য, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জন্য, প্রতিবন্ধী এবং উপজাতি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, বিনা বেতনে অধ্যয়ন, টিউশন ফি ছাড়সহ নানান সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত স্বল্প খরচে পড়তে পারে। এর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বললে প্রথমেই বলা যায় ভর্তির বিষয়ে। এই প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়, ধূমপায়ী, নেশাগ্রস্থদের ভর্তির কোন সুযোগ নেই। এখানে নিজস্ব লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জন্য সব সময় উদ্বুদ্ধ করা হয়। সাঁতার, মোটরসাইকেল চালানো শিখে নিতে হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স নামক প্রাণী চিকিৎসা এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে। একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।
এছাড়াও মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিওথেরাপি, বায়োকেমিষ্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজির মতো বিরল বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ। খেলাধুলায়ও এই প্রতিষ্ঠান বেশ সুনজর দিয়েছে। ইনডোর আর আউটডোরের বড় বড় মাঠই স্পষ্টভাবে তা প্রমাণ করে দেয়। এজন্য তার ফলও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন বড় বড় পর্যায়ের খেলায় লাভ করেছে অভূতপূর্ব সাফল্য।
২০১৯ বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্প ফুটবলে নারী এবং পুরুষ দুটো দলই চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই টুর্ণামেন্টে সাতটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে চারটিতেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ফারাজ গোল্ডকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং এবারের ২০২০ বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্পেও মেয়েরা দু’টি খেলায় ফাইনালে পৌঁছেছে।
জাতীয় প্রমীলা দলের ফুটবল অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছাড়াও আরো দুজন নামকরা খেলোয়াড এই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। জাতীয় প্রমীলা হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড ছন্দা রাণী সরকারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও ব্যতিক্রমী হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদেরও কাজ করে জীবনযাপন করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় অংশ নিলে ২৫% টিউশন ফি রেয়াতের সুযোগ রয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন বড় বড় টুর্নামেন্ট জয় করছে প্রতিনিয়ত।
পথচলার ২২ বছরে অনেক অনেক অর্জন আর অনেক সুখ্যাতি বয়ে নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিনগুলোতে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে, অর্জনের পরিধি ক্রমশ বাড়াতে থাকবে এটাই কামনা করে এই প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো। এই প্রতিষ্ঠানের একজন হিসেবে গর্ববোধ করার খ্যাতিটা সবসময় উজ্জ্বল থাকবে, এটাই চান তারা।