যেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, সেদিন থেকে শিক্ষকদের বেতনও বন্ধ
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এদিন থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ বন্ধ রেখেছে রাজধানীর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি)। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক এই অভিযোগ করেছেন। তাদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠান শুধু বেতন বন্ধই রাখেনি, টিউশন ফি আদায় না হলে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার কথাও জানিয়েছে।
ওই শিক্ষকদের অভিযোগ, বাসা থেকে অনলাইনে পাঠদান, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল তৈরির কাজ করলেও তাদেরকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো চাকরি থেকে ছাটাই করার প্রক্রিয়া চলছে। ছাটাইয়ের অভিযোগটি অস্বীকার করলেও বেতন না দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্তাব্যক্তি। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতে না পারা ও নতুন ছাত্র ভর্তি বন্ধ থাকায় বেতন পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। টিউশন ফি আদায় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। যাদের অধিকাংশই ডিপ্লোমা শেষে বিএসসি করছেন। এদের অনেকেই চাকরি করে নিজের টিউশন ফি নিজে দিয়ে থাকেন। তবে করোনায় অফিস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে টিউশন ফি দিতে পারছেন না তারা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ও অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধ রেখেছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থা ওই অর্থে খারাপ নয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউবির এক শিক্ষক বলেন, ‘মার্চ মাসের ১৫ কার্যদিবস হিসাব করে আমাদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। মার্চের অর্ধেক বেতন দিলেও এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। অথচ আমরা বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন নিচ্ছি।’ এ সময় বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থা চলছে বলে জানান ওই শিক্ষক।
তিনি আরো বলেন, একদিকে আমাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে চাকরি থেকে ছাটাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করে দিতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজে চাকরি করে তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করে থাকে। শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে সমস্যার কথা বললেও আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মার্চ মাসের বেতন অর্ধেক দেয়ার কথা স্বীকার করেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, মার্চ মাসের বেতন আংশিক দেওয়া হয়েছে সত্য, তবে এপ্রিল মাসের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার বক্তব্য, অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের টিউশন ফি পরিশোধ না করায় শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা অচিরেই কেটে যাবে। তবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করে দিতে তাদেরকে (শিক্ষক) চাপ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে ইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান জানান, শিক্ষকদের মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়া হয়েছে এবং গতমাসেরও বেতন শিক্ষকদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদে;র এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কতিপয় শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ করেছে।
উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর বাড়িতে চলে গেছে। তারা ঠিকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেয়নি। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কীভাবে নেয়া হবে সে বিষয়ে মিটিং ডাকলে কিছু শিক্ষক সেই মিটিংয়েও অংশ নেয়নি। তবুও তাদের বেতন আটকে রাখিনি। চাকরিচ্যুত করার তো প্রশ্নই আসেনা।
তিনি আরও জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই বেশি। তাদের কখনো আমি টিউশন ফির জন্য চাপ দেয়নি। আমাদের অনলাইনে পরীক্ষা হয়ে গেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের সব টাকা দিতে বলে। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি তোমরা যে যতটুকু পারে বেতন দাও; না পারলে যখন পারো দিও। টিউশন ফি আদায় করে দিতে তাদেরকে (শিক্ষক) চাপ দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।