বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাইয়ের আগে নতুন সেমিস্টার নয়
চলমান সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে চালিয়ে নিতে পারলেও জুলাইয়ের আগে নতুন সেমিস্টারের কার্যক্রম শুরুর সুযোগ পাচ্ছে না দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন নির্দেশনাই দিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যদিও নতুন সেমিস্টারের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে মরিয়া বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনলাইনে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি নির্দেশনা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় ইউজিসিকে। সে আলোকে সম্প্রতি একটি খসড়া নির্দেশনা তৈরি করেছে ইউজিসি। খসড়াটি ইউজিসির চেয়ারম্যান অনুমোদনের পর আগামীকালকের মধ্যেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।
খসড়া নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে নিতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এর যে কোনটি অনুসরণের সুযোগ দিতে যাচ্ছে ইউজিসি। তবে নতুন কোনো সেমিস্টারের কার্যক্রম আগামী জুলাইয়ের আগে শুরু করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেক্ষেত্রে নতুন সেমিস্টার শুরু করতে আরো দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে তাদের। এরফলে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে যাবে ভর্তি কার্যক্রমও।
পড়ুন: অনলাইনে এখনই ভর্তি নিতে পারবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
এ প্রসঙ্গে ইউজিসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কয়েক বছর ধরেই দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদিও বেশির ভাগই তা মানছে না। বছরে দুইবার ভর্তি নিলে এ অচলাবস্থার মধ্যে ভর্তি নিয়ে এত ঝামেলা সৃষ্টি হতো না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বছরে তিনবার ভর্তি নেয়, এখন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তারাই বেশ মরিয়া। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির দিকেই মনোযোগ বেশি। কিন্তু আমরা দুই সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে চাই।
এর আগে গত শুক্রবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, আমরা মূলত সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করছি। আমরা হয়তো জুলাই থেকে নতুন সেমিস্টার শুরুর নির্দেশনা দেব। এর আগে চাইলেও তো কিছু করা যাবে না।
তিনি বলেন, টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের গাইডলাইন হলো- শিক্ষার্থীরা যতটুকু পারে, তাদের কাছ যেন ততটুকু ফি আদায় করা হয়। কারণ, আজ হোক কাল হোক; তারা টাকা দেবেই। ফি পরিশোধ না করলে তো কোনো শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে না। তাই আমরা চাই, এই মুহুর্তে যেন আমাদের ছাত্রদের ওপর জুলুম করা না হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে টিউশন ফি আদায়ের পদ্ধতি জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ফি আদায়ের ক্ষেত্রে ইনস্টলমেন্ট বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা হয়তো প্রথম ইনস্টলমেন্টে কিছু টাকা দেবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরেকটা ইনস্টলমেন্ট দেবে। এভাবে হয়তো অনেক শিক্ষার্থী দেবে; আবার যারা দিতে পারবে না, তাদেরকে জোর করা যাবে না।
পড়ুন: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনই অনলাইনে ভর্তি নয়, অপেক্ষা আরো ১ মাস
জানা যায়, একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়েও নির্দেশনা থাকছে ইউজিসির চিঠিতে। এতে মানবিক কারণে টিউশন ফির জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যেন কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ না করা হয়, সেজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বিলম্ব বা চাকরিচ্যুত করা থেকে বিরত থাকার জন্যও নির্দেশনা থাকবে।