টিউশন ফি ও ভর্তিতে নমনীয় না হলে ছাত্র হারাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
কোভিড-১৯ তথা করোনাকালে টিউশন ফি আদায়ে নমনীয় না হলে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হারাবে। এমনটাই অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ী মানসিকতা নিয়ে চলছে। চলমান পরিস্থিতিতে এই মনোভাব পরিবর্তন না হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের ছাত্র হারাবে। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটের কারণে সারাদেশের অবস্থা ভয়াবহ। পরিস্থিতি এমন নয় যে, ছাত্ররা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মুখিয়ে আছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি টিউশন ফি আদায় ও ভর্তির ক্ষেত্রে সদয় ও নমনীয় না হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে দেখবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নানা সঙ্কট নিয়ে শুক্রবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনোভাবেই স্বাভাবিকের মত ছাত্র-ছাত্রী পাবে না। তাই ছাত্রদের ওপর যত বেশি চাপ পড়বে, তত বেশি তারা ছাত্র হারাবে। তাই টিউশন ফি’সহ সবক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাড় দিতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবকিছুর জন্য এত অস্থির কেন? কারণ, প্রতিষ্ঠানের সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেই তারা কিছু ফি পারে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কথাও তো ভাবতে হবে।
মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মূলত সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করছি। টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের গাইডলাইন হলো- শিক্ষার্থীরা যতটুকু পারে, তাদের কাছ যেন ততটুকু ফি আদায় করা হয়। কারণ, আজ হোক কাল হোক; তারা টাকা দেবেই। ফি পরিশোধ না করলে তো কোনো শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে না। তাই আমরা চাই, এই মুহুর্তে যেন আমাদের ছাত্রদের ওপর জুলুম করা না হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে টিউশন ফি আদায়ের পদ্ধতি জানিয়ে কাজী শহীদুল্লাহ ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ফি আদায়ের ক্ষেত্রে ইনস্টলমেন্ট বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা হয়তো প্রথম ইনস্টলমেন্টে কিছু টাকা দেবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আরেকটা ইনস্টলমেন্ট দেবে। এভাবে হয়তো অনেক শিক্ষার্থী দেবে; আবার যারা দিতে পারবে না, তাদেরকে জোর করা যাবে না। অর্থ্যাৎ শিক্ষার্থীদের প্রতি সদয় ও মানবিক হতে হবে। কারণ, সব শিক্ষার্থীর পরিবার উচ্চবিত্তের নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই বিষয়টাই মাথায় রাখতে হবে।
টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সদয় না হলে ইউজিসি ব্যবস্থা নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে আমরা অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত করেছি। যদিও তারপরও সেখানে ছাত্ররা ভর্তি হয়। ছাত্ররা যদি সেখানে ভর্তি না হত, তবে তারা আজকে এই সাহস করতে পারত না। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ই্উজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক, তবে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। মন্ত্রণালয় যেভাবে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে, আমরা সেটা পারি না। তারপরও আমরা নিজেদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকু করব।
এদিকে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়-ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হবে। এক্ষেত্রে তারা ঢাকা থেকে গ্রামে বই না নিয়ে যাওয়া, দুর্বল ইন্টারনেট কানেকশন, মানসিক অবস্থা ও লকডাউন পরিস্থিতিতের সৃষ্ট নানা বিষয় তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে দাবি তোলেন, এক সেমিস্টার ফি মওকুফের। আবার সেমিস্টার ড্রপ দেওয়ার কথাও বলেছেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রায়াত লাজিম নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে বলেছে। যে সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো সেমিস্টার ফি আদায়ের সুযোগ নিচ্ছে। ফলে আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ, অনেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যাদের পক্ষে সেমিস্টার ফি’র বোঝাবহন কোনভাবেই এই মুহূর্তে সম্ভব না।
এর আগে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনলাইন বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি তাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয় ঠিক করবে। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা কীভাবে নেবে, সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে কমিশন। পাশাপাশি আগামী সেমিস্টারের ভর্তি কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত চলবে; সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন দেবে।