নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করেই ‘সামার সেমিস্টার’ শুরু করছে ড্যাফোডিল ইউনিভিার্সিটি
নতুন সেমিস্টারের ক্লাস প্রক্রিয়া শুরু করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এই তথ্য অভিযোগ হিসেবে জানিয়েছেন। লিখছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরীক্ষা নিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে সেই নিষেধ অমান্য করে নতুন সেমিস্টার শুরুর ছক কষছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও করোনা পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে এমনিতেই দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় পার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন সেমিস্টারের ক্লাস তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১তম সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন করে সামার সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। যার ক্লাস আগামী মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু হবে বলে জানানো হয়। ওই ছাত্রী বলেন, এখনও আমাদের স্প্রিং সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তাছাড়া অনলাইন-অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া এমনকি পরীক্ষা ছাড়া গ্রেড দেয়ার বিষয়েও ইউজিসি’র নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন সেমিস্টার শুরু করার ব্যাপারটি কতটা যুক্তিযুক্ত- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভোগের একজন বলেন, ফোন করে এটা বলা হচ্ছে যে ‘যতটুকু সম্ভব ফি পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন করুন। রেজিস্ট্রেশন ফি না দিতে পারলেও আবেদন করতে বলা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ফোন করে রেজিস্ট্রেশন নয়, বরং নতুন সেমিস্টারের জন্য প্রি-রেজিস্ট্রেশনের কথা বলা হচ্ছে। যদিও প্রি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য দেওয়া এই ফোনকলকে ‘শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেওয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন এই সেমিস্টারের ক্লাস আগামী মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানানো হয়।
জানা যায়, সেমিস্টার শুরুর অংশ হিসেবে ইতোধ্যেই বিভিন্ন বিভাগ কোর্স অফার করেছে। বলা হয়েছে ‘টিচিং ইভালুয়েশন’ সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। এক্ষেত্রে সমস্যা হলে নিজ নিজ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা কোন শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশনের কথা বলিনি, প্রি-রেজিস্ট্রেশনের কথা বলেছি। এটা একধরণের সার্ভে। আমরা শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যই এই রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, কারা কারা নতুন সেমিস্টারের ক্লাস করতে ইচ্ছুক এবং কারা নয়। কারণ দেখা যাচ্ছে, ঈদের আগেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তখন তো আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি তারই অংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ফোন দেয়া হচ্ছে; তবে তাদের কাছ ফি চাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। কারণ, শিক্ষার্থীদের ফোন দিলে তারা নিজেরাই ফি’র কথা জিজ্ঞেস করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ তাদের কাছে কোন প্রকার ফি’র কথা বলেনি। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী মাসে সামার সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। সেজন্যই তাদেরকে ফোন করা হয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। কারণ, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা কার্যক্রম শুরু করব না। সবকিছু স্বাভাবিক হলেই আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করার বিষয়ে আমরা কোন নির্দেশনা দেইনি। শুধু চলতি সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে নিতে বলেছি। নতুন সেমিস্টারের ক্লাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, সবাই এখন আতঙ্কে আছে। শিক্ষার্থীরা বাঁচলে তবেই তো ক্লাস করবে। তারাই যদি না বাঁচে, তাহলে ক্লাস করবে কারা? দেশের এমন পরিস্থিতিতেও যারা এমন মনোভাব পোষণ করছে, তারা অমানবিক কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন প্রকার ফি নেওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সমগ্র দেশেই লকডাউন চলছে। অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার কষ্টে দিন পার করছে। তাই এই মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোন ফি আদায় করা যাবে না। এমনটি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।