২৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:২৪

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় শিক্ষায় ব্যয়ের আহ্বান শিক্ষা উপমন্ত্রীর

  © সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যের দৃষ্টিতে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় শিক্ষার কাজে লাগাতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষাবিদদের স্বাধীনতা দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।’ সোমবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হক চৌধুরী। সম্মানিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেজবাহউদ্দিন আহমেদ ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সেক্রেটারি বেনজির আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান, ইউল্যাবের উপাচার্য প্রফেসর এইচ এম জহিরুল হক, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আলী নকি, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম লুতফর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি ড. কাজী আনিস আহমেদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমাদের রাষ্ট্র একটা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে যে বিষয়গুলো আমরা হারিয়েছিলাম, তার মধ্যে রয়েছে আমাদের শিক্ষা পরিবারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা যে চেতনা আশা করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর সেই চেতনা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবে, আমাদের সংবিধান থেকেও সেটা মুছে দেওয়ার চেষ্ট করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, সংবিধান সংশোধন করে সেটা বন্ধ করা হয়েছে। আদর্শের চেতনা মুছে ফেলা হলো। যারা চিন্তা-চেতনায় সাম্প্রদায়িক তারা ষড়যন্ত্রমূলক কাজের মধ্য দিয়ে আবার পাকিস্তানকে বানানোর চেষ্টা করেছে। তারা সফল হতেও যাচ্ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় তা সফল হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধির পথে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, বৃত্তিমূলক ও উচ্চমার্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা তাদের মতো করে প্রতিষ্ঠান চালাবেন। অর্থের যোগান দেবে সরকার আর বিশ্ববিদ্যালয় চলবে স্বাধীনভাবে, বঙ্গবন্ধু বিশেষ আইন দ্বারা সেই অধিকার দিয়েছিলেন।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে শিক্ষাবিদদের স্বাধীনতা দিয়ে অর্থ ব্যবস্থাপনা থেকে আলাদা করেছিলেন। আমরা বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয় সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমরা যারা পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। আমরা যারা অর্থ যোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছি, তাদের ধারণ করতে হবে বঙ্গবন্ধুর সেই মানসিকতা।’

তিনি বলেন, ‘বোর্ড অব ট্রাস্টিজ যারা থাকবেন তাদের সেই দৃষ্টিতে দেখতে হবে, আমি অর্থ দিয়েছি তাই সেখানে হস্তক্ষেপ করবো, সেটা যেন না হয়। কারণ বঙ্গবন্ধু সেটা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি, তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আর তার শিক্ষা আমরা কতটুকু ধারণ করছি, সেই আত্মসমালোচনা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’

নওফেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই মানসিকতাকে ধারণ করার যোগ্যতা আছে। এই মানসিকতা থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করেছেন। সেখানে ট্রাস্টির ধারণা দেওয়া হয়েছে, মালিকানার ধারণা নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই মানসিতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। আমরা বাণিজ্যের দৃষ্টিতে যেন শিক্ষাকে না দেখি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ট্রাস্টির ধারণা এনেছেন শেখ হাসিনা। যদিও আজ আমাদের প্রশ্ন করতে হচ্ছে সেই ধারণা আমরা কতটুকু লালন করতে পারছি?’ তিনি আরও বলেন, ‘সবার প্রতি আহ্বান জানাবো বঙ্গবন্ধু দেশ দিয়েছিলেন বলেই বিলাসী গাড়িতে চড়ছি। ব্যক্তি জীবনে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি হয়েছে। তাই উচ্চশিক্ষায় যেনও আমাদের নৈতিক স্খলন না হয়।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে দল-মত থেকেই আসি না কেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা চেতনা অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিজের দায়িত্ব পালনে করতে হবে, নৈতিকতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।