নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ভর্তি করছে ৩২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
চলতি শতাব্দীর শুরুতেও দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। তবে এখন সে সংখ্যা শতাধিক।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৩টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতিমালা রয়েছে ইউজিসির। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তার কোন তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য পাঁচ দফা আলটিমেটাম দিয়েছে ইউজিসি। তবে এ আদেশ না মানায় ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়কে শাস্তি হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এমনকি সমাবর্তনও করেছে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৯৫টির কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে। এরইমধ্যে গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইউজিসির পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া ৩২টি প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা এবং আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সচেতন অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা বেলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়য় নিয়ম মানছে না তাদের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়ার পাশাপাশি আরও কঠোর হতে হবে। তা নাহলে, চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। এজন্য এসব বেসরকারি বিশ্বিবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ বার আলটিমেটাম দেয় ইউজিসি। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে নির্ধারিত সময়ে মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক থেকে পাঁচ বছর সময় চাইলে এ নিয়ে আর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর তথ্য চেয়ে ১৫ এপ্রিল ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইউজিসির পাঠানো দুটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬টি আংশিকভাবে তাদের কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে চালাচ্ছে। বাকিগুলো জমি কিনলেও এক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বাইরে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করলে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ কমে যাবে এমন শঙ্কা রয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলে তারা নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপন করছেন। ঢাকা বাইরে ক্যাম্পাস করলেও ঢাকায়ও কার্যক্রম চালাতে চাচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার বাইরে স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও ঢাকায়ও তাদের কার্যক্রম চলছে।
এভাবে নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেও শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেছেন, ১২ বছরের বেশি বয়সী ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাবে, এমন সিদ্ধান্ত ছিল। এর পরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো কার্যক্রম চালাবে না। সিদ্ধান্ত না মলে সেগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। কিন্তু তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করে চলেছে বলেও জানান তিনি।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম মূল্যায়নে মন্ত্রণালয় চার সদস্যের কমিটি গঠন করলে তারা ৩২ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে চারটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সে আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে বাস্তবে এ নির্দেশ না মেনে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিলেও তা লঙ্ঘন করে তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে।
তবে একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের কোনো নোটিশ পাননি। এছাড়া অধিকাংশই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। ইউজিসির নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার দাবিও করেছেন তারা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দু-একটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের কমিটির সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আগে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রয়োজন। তবে এসবের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন।’ এ লক্ষ্যে শিগগির বৈঠক ডাকা হবে বলেও জানান তিনি।