২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩০

সন্তানদের অর্জনের নেপথ্যে অভিভাবকদের ত্যাগ নীরব স্থপতির ভূমিকা রাখছে

ইউআইইউর ৮ম সমাবর্তনে বুয়েট ভিসি  © টিডিসি ফটো

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেছেন, ডিগ্রি অর্জন করা শিক্ষার শেষ নয়। আজীবন শেখার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৮ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তানদের অর্জনের নেপথ্যে তাদের ত্যাগ ও বিশ্বাস নীরব স্থপতির ভূমিকা রাখছে। শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তথ্য নয় চরিত্র গঠনের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন তারা।

ভিসি বলেন, উদ্ভাবন কেবল প্রযুক্তি বা সফটওয়্যারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি মানসিকতা। সীমাবদ্ধতার মধ্যেই টেকসই ও কার্যকর সমাধান বের করার ক্ষমতাই প্রকৃত উদ্ভাবন। 

সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, জলবায়ু অভিযোজন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো উদ্যমী দেশের জন্য একটি ‘সুযোগের জানালা’ খুলে দিয়েছে।

নবীন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন তিনি—উদ্ভাবনে নেতৃত্ব, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জন্য প্রস্তুতি এবং পেশাগত নৈতিকতা।

অধ্যাপক বদরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় উদ্ভাবন মানে কম সম্পদে বেশি ফল আনা। স্মার্টফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া বা কৃষকদের জন্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন—এসবই বাস্তব উদ্ভাবনের উদাহরণ। তিনি বলেন, উদ্ভাবনের জন্য নিখুঁত পরিবেশের অপেক্ষা করবেন না; সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে বড় সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকেই।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন শ্রমনির্ভর শিল্পের ওপর দাঁড়ানো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তর জরুরি। আগামী দশকের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে উচ্চমূল্যের সেবা, গ্রিন ইঞ্জিনিয়ারিং মডেলে। নবীনদের নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা ও সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতাই ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চালিকাশক্তি হবে বলে জানান তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ’ যেন কেবল পোশাকের লেবেল না থেকে উন্নত প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্বের পরিচয়ে পরিণত হয়—এ দায়িত্ব এই প্রজন্মের।

পেশাগত জীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে ভিসি বলেন, জ্ঞান যদি চরিত্র দ্বারা পরিচালিত না হয়, তবে তা সমাজের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। সহজ পথ ও সঠিক পথের দ্বন্দ্বে সঠিক পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৌশলী, হিসাববিদ বা গবেষক—যেই হোন না কেন, সবার কাজই মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। ব্যক্তিগত সাফল্য ও জনস্বার্থের সমন্বয়েই প্রকৃত উৎকর্ষ নিহিত।