ধর্ষণে অভিযুক্তদের পক্ষে থানায় গিয়ে তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার চার শিক্ষার্থীর পক্ষে থানায় যাওয়ার অভিযোগে আইন বিভাগের এক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্তদের রক্ষায় প্রশাসনিক উদাসীনতা ও ধামাচাপার অভিযোগ তুলে তারা বিভাগীয় প্রধানসহ দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিও জানায়।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে তারা আইন বিভাগের শিক্ষক লিমন হোসেনকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন।
সম্প্রতি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়ে গণধর্ষণ, ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ওই ঘটনার পর লিমন হোসেন থানায় যান বলে জানা যায়। এ ছাড়া ওই ধর্ষণের ঘটনায় প্রায় ২০ দিন আগে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, আট মাস আগে ওই শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হন। এর পর থেকে তিনি টানা হুমকির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি আবারও তাকে বিষাক্ত পানীয় পান করায় ও হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বিভাগে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আইন বিভাগের প্রধান এবং প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল আলম বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলেও সে বিষয়ে অভিযুক্তদের রক্ষায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন ফারাহ ইকবাল এবং লিমন হোসেন। এ ছাড়া ধর্ষণে অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হলে তাদের ছাড়িয়ে আনতে লিমন হোসেন থানায় যান।
এ সময় তারা প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতি, আইন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল আলম, সহকারী অধ্যাপক ফারাহ ইকবালের পদত্যাগের দাবি জানান।
এদিকে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ ইকবাল অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধান (রফিকুল আলম) যেকোনো ঘটনাই গুরুত্বহীনভাবে দেখেন। এমনকি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ দিতে এলেও সে ব্যাপারে তার অভিযোগ নিতেও তিনি গড়িমসি করেছেন। এমনকি অভিযুক্ত দেলোয়ারের সঙ্গেও ওই দিন লিমন হোসেনকে বসে থাকতে দেখা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিমন হোসেন বিভাগে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষকদের বিভিন্ন সময়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীকে উসকে রাখেন এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রভাবিত করার চেষ্টা করতেই থাকেন।’
এ বিষয়ে প্রভাষক লিমন হোসেন বলেন, ‘আমি একাই থানায় গেছিলাম ব্যক্তিগত কাজে, অভিযুক্তদের সঙ্গে আমার কোনো কথা বা দেখাও হয়নি। আমি থানায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখি পুলিশ তাদের নিয়ে গাড়িতে করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি থানায় গেছিলাম একা, আসিফ কামরান চৌধুরী বা কেউই আমার সঙ্গে ছিল না। আমি থানায় কোনো দেনদরবার বা দর-কষাকষির জন্য যাইনি। যদি যেয়ে থাকি এবং তার প্রমাণিত হয়, তাহলে আমার যা শাস্তি হবে আমি মেনে নেব।’
এদিকে এসব ঘটনার জেরে উপাচার্যের সভাকক্ষে আলোচনায় বসেছেন বিভাগের অন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।