চোরের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের, বললেন— ‘ভিসিকে কল দে, দেখি কী করে?’
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চুরির ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান বাবু। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং হেনস্তার শিকার সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক চোরকে হাতে-নাতে ধরেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশেপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ওই চোরের ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে থাকলে ঘটনাস্থলে উৎসুক আবহ তৈরি হয়। বিষয়টি নজরে আসলে ক্যাম্পাস সাংবাদিক আতিকুর রহমান বাবুও ওই ঘটনার ভিডিও করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তার ওপর চড়াও হন। তাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ৩০ মিনিট আটকে রাখেন।
সাংবাদিক আতিকুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি শুধু ঘটনাটি ভিডিও করছিলাম। তখন তারা বলে, সাংবাদিকতা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি লাগবে। এরপর তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে প্রক্টর স্যারকে ফোন দিতে গেলে কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা নকিব বলেন, প্রক্টর স্যার বলেছেন বেঁধে নিয়ে যেতে।’
‘হলের পানির ফোয়ারা চুরি নিউজ করার পর থেকেই সিকিউরিটির লোকজন আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আজ চোরের ভিডিও করতে গেলে সিকিউরিটি পরিচালক শাহ আলম আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন’।— ভুক্তভোগী
তিনি বলেন, ‘হলের পানির ফোয়ারা চুরির নিউজ করার পর থেকেই সিকিউরিটির লোকজন আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আজ চোরের ভিডিও করতে গেলে সিকিউরিটি পরিচালক শাহ আলম আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে চোরকে গোপন রুমে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনের লোকেরা মারধর শুরু করলে সেখানে যাই; পরে চোরকে টেনে হেছড়ে কন্ট্রোল রুমের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে আমাকে হেনস্তা করা হয়।
বাবু আরও বলেন, আমি ভিডিও করতে গেলে সিকিউরিটির লোকজন আমাকে বলে সাংবাদিকতা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি লাগবে। এ সময় আমি মোবাইল বের করতে গেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে ডুকিয়ে জোর করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে আমি প্রক্টর ও ভিসিক স্যারকে কল দিতে গেলে তারা বলেন, ‘ভিসিকে কল দে, দেখি কি করে!’ ইমতিয়াজ ও রাসেল আমাকে টেনে নিয়ে যায় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। নকিব শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ (বৃহস্পতিবার) ধরা পড়া চোরটি গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাস থেকে সাইকেল, আইফোন ও পানির ফোয়ারাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করেছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে ‘এক্সপ্রেস সিকিউরিটি সার্ভিস’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার চুরির ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা কোম্পানির কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে সিকিউরিটি অফিস নামেই, কার্যত তারা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসে না। আর এ কারণেই প্রায়ই তাদের জিনিসপত্র খোয়া যায়।
সাংবাদকি হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সিকিউরিটি ইনচার্জ শাহ আলম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়; সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আর. কবির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। সাংবাদিক হওয়ার আগে সে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমার শিক্ষার্থীকে হেনস্তার ঘটনায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় ঘটনার বিষয়টি বিস্তারিত জেনে আগামীকাল ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।’