১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৯

‘সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন, সেটিই জাতির গণতান্ত্রিক পরিমাপের প্রতিফলন’

পলিসি ডায়ালগে অতিথিরা  © সংগৃহীত

সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন, সেটিই জাতির গণতান্ত্রিক পরিমাপের প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি (ডিআইইউসাস) কর্তৃক আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও নীতি প্রস্তাবনা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি পরিবর্তিত গণমাধ্যম দেখতে চাই, যেখানে একজন সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন—যেখানে অনুসন্ধানই হবে সত্যের সমাহার, আর দায়িত্ববোধই হবে সাংবাদিকতার মূল শক্তি।’

সিনিয়র সচিব আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান অর্জনের স্থান নয়, এটি নতুন জ্ঞান সৃষ্টিরও এক প্রাণকেন্দ্র। গবেষণার মাধ্যমে এখানে সমাজ, রাষ্ট্র ও গণমানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে নীতিনির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, কারণ এটি সমাজের দর্পণ। এর স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা—দুটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নীতি সংলাপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জবাবদিহিতা ও নীতি কাঠামোর ভবিষ্যৎ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। এতে সরকারের নীতিনির্ধারক, সিনিয়র সাংবাদিক, গবেষক, আইন বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব (আইএমইডি) মো: কামাল উদ্দিন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এমডি আয়াতুল ইসলাম, এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার (উপসচিব) জুলকার নায়ন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ফসিহ উদ্দিন মাহতাম প্রমুখ।

ঢাকা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যম আজ বাংলাদেশের তথ্যপ্রবাহের মূল স্রোতে পরিণত হয়েছে। তবে দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে—বিশেষ করে তথ্যের সত্যতা যাচাই, আর্থিক টেকসইতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপসচিব জুলকার নায়ন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা টিকে থাকতে পারে না। গণমাধ্যমের টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি সময়ের দাবি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত। ভয় বা চাপের মধ্যে থেকে কখনও সত্যিকারের সাংবাদিকতা সম্ভব নয়।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো ডিফেন্স জার্নালিজমকে একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রাপ্তি ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইসলামে সত্য প্রকাশ ও ন্যায়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমও যদি এই নীতিকে অনুসরণ করে, তাহলে সমাজে ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে জনগণের জানার অধিকার রক্ষা করাও গণমাধ্যমের দায়িত্ব।’

প্যানেল ডিসকাশনের সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল ভিত্তি। সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মত, রাজনৈতিক ঝোঁক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ কখনোই সংবাদ উপস্থাপনে প্রভাব ফেলতে পারে না। সত্যকে যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরাই পেশাদার সাংবাদিকতার মূল নীতি।’

ডিআইইউসাস সভাপতি কালাম মুহাম্মদ বলেন, ‘গণমাধ্যম সমাজের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। এই সংলাপের মাধ্যমে গণমাধ্যম সংস্কার ও উন্নয়ন বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে গেছে বলে আমরা আশাবাদী।’

আয়োজকদের মতে, এই নীতি সংলাপ তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ও অভিজ্ঞতামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা ভবিষ্যতের গণমাধ্যম নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথি এবং সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।