৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৮

এক বিশ্ববিদ্যালয়েরই ৯ ক্যাম্পাস!

  © সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম যেন কোনভাবেই থামছে না। একের পর এক অনিয়ম চিহ্নিত হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়াও হেচ্ছে। তারপরও থামছে না অনিয়ম-দুর্নীতি। দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলা হলেও তাতেও কর্ণপাত করছে না অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে শুধুমাত্র শান্তা-মারিয়ামেরই নয়টি অননুমোদিত ক্যাম্পাস চিহ্নিত করা হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি রাজধানীর চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি অননুমোদিত ক্যাম্পাস চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে এককভাবে শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটিরই সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাম্পাস রয়েছে।

জানা গেছে, বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অননুমোদিতভাবে সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস বা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে বেশ কয়েকবার নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। এর বাইরে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব অননুমোদিত ক্যাম্পাস পেয়েছে ইউজিসি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ সালের আইনের ভিত্তিতে চললেও সেখানে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। এ সুযোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত স্থানের বাইরে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করছে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ আইনে প্রতিষ্ঠিত। যেহেতু সে আইনে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, তাই তারা সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

ইউজিসির তালিকা অনুযায়ী, শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ১০টি ক্যাম্পাসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস। বাকি ক্যাম্পাসগুলো অনুমোদন না নিয়েই সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন না নেয়া ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে ছয়টিই উত্তরায়।

এর মধ্যে ১৩ নম্বর সেক্টরেই তিনটি। এগুলো হলো এক নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়ি, ১৭/এ সড়কের ১১ নম্বর বাড়ি ও ১৪ নম্বর সড়কের ৬১ নম্বর বাড়ি। এছাড়া সেক্টর-১১ এর ১৯ নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়ি, ১৫ নম্বর সড়কের ২০ নং বাড়ি ও সেক্টর-১২ এর ১৭/এ ও ১৭/বি সড়কে অবস্থিত ক্যাম্পাস। বাকি তিনটি ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে ১৩, গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ, প্লট ১৩৫, জিনজিরা সড়ক, সাভার ও ৫/৪, ব্লক-সি, লালমাটিয়া।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১৩ ধারার (১) উপধারায় অনুমোদিত ক্যাম্পাস বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য দেয়া সাময়িক অনুমতিপত্রে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে শহর কিংবা স্থানে অনুমোদিত ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে; তার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।

আইনের উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর অধীনে উল্লিখিত শহর বা স্থানে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস সীমিত রাখতে হবে। অন্য কোনো স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা বা কোনো ক্যাম্পাস অথবা শাখা স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।

অন্য এক উপধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাসের স্থানে বা শহরে শর্তসাপেক্ষে অনুষদ বা ইনস্টিটিউট পরিচালনার আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা ইউজিসি পরিদর্শনসাপেক্ষে অনুমোদন দেবে। যদিও কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এ ব্যাপারে ইউজিসি‘র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘১৯৯২-এর আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সময়সীমা পার হয়েছে। এখন সব কার্যক্রম পরিচালনার কথা স্থায়ী ক্যাম্পাসে। অস্থায়ী কোনো ক্যাম্পাস থাকারই কথা না।’

তিনি বলেন, ‘যদি তারা আইন মেনেই চলে, তাহলে তো সবার স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা এর আগেও সবাইকে বলেছি, এখনো বলছি, আপনারা স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলে সেখানে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করুন।’