বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্ন’ করার অভিযোগ দিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ছাত্রকে শোকজ
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (ইইউবি) ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, বোর্ড অব ট্রাস্টির কয়েকজন সদস্যের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগ, আর্থিক লেনদেনে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ, হিসাব শাখায় প্রবেশ করে অডিট সংক্রান্ত নথিপত্র দাবি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্বহালের জন্য চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর নাম মশিউর রহমান (রাঙ্গা), তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গত ২ জুলাই (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নোটিশে বলা হয়েছে, কেন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব চেয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মশিউর রহমান (রাঙ্গা) বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি প্রক্টর স্যারকে বলে এসেছি, আমি এর জবাব দেব না।’
এ বিষয়ে প্রক্টর দেওয়ান মো. আল-আমিন বলেন, ‘রাঙ্গা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করছে না, সে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জোরপূর্ব হিসাব শাখায় ঢুকে অডিট সংক্রান্ত নথি দাবি করে। ইউনিভার্সিটির জন্য বর্তমানে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে রাঙ্গা। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বলে নিজেই নিয়ম তৈরি করে ইউনিভার্সিটি সকল কাজে অনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করে বাধা সৃষ্টি করছে, যেটা একজন শিক্ষার্থী হিসাবে কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ উল্লেখ করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যার লিখিত জবাব ৫ জুলাই এর মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। সে কোনো লিখিত জবাব দেননি এখন পর্যন্ত, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরোও বলেন, ইউনিভার্সিটি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গণ। যে সকল শিক্ষার্থী ইইউবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করতে ইইউবি শৃঙ্খলা কমিটি কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতা রাঙ্গাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা শৃঙ্খলা কমিটির এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আহমেদ ফরহাদ খান বলেন, একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে, ইতিমধ্যে তার অনেকগুলো প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে, ইইউবি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বোর্ড অব ট্রাস্টির কিছু সদস্যের উপর চাপ প্রয়োগ করে আর্থিক লেনদেনে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করায় এক শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রাক্তন বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যানের কর্তৃক প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ নেওয়ার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টি থেকে সেই সুযোগ না পাওয়ায় হিসাব শাখায় গিয়ে জোরপূর্বক অডিট সংক্রান্ত নথি দাবি করা সহ একাধিক অনৈতিক কার্যকলাপের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আহমেদ ফরহাদ খান আরোও বলেন, প্রাক্তন বিজনেস চেয়ারম্যান ফারজানা আলমের সাথে বোর্ড অব ট্রাস্টির সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল আহমেদ খানের অনৈতিক কার্যকলাপের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মকবুল আহমেদ খান পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বোর্ড অব ট্রাস্টির সকল মেম্বারদের সম্মতিতে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয় এবং আরজেএসসি পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটির তালিকা জমা দেওয়া হয়। এনএসআই-এর তদন্তের পরে যা ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ আরজেএসসিতে রেকর্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মকবুল আহমেদ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলীম দাদ বলেন, একটি অরাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন রাজনীতি চলবে না, যে যত বড় শক্তিশালী ব্যক্তিই হোক না কেন ইইউবিতে কোনো দুর্নীতিবাজের জায়গা নেই। জাল পিএইচডি সার্টিফিকেট ব্যবহারের সত্যতা পাওয়াই বিজনেস চেয়ারম্যান ফারজানা আলম পদত্যাগ করেছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর এবং শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।