২০ জুন ২০২৫, ২১:১৮

আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্যে শীর্ষে ড্যাফোডিল

আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্যে শীর্ষে ড্যাফোডিল  © টিডিসি সম্পাদিত

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিক থেকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দুটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষা সংস্থা—টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ও কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে ডিআইইউ দেশের অন্যতম শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জায়গা করে নেয়।

গত ১৮ জুন প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২৫-এ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সামগ্রিকভাবে শীর্ষস্থান লাভ করে। এরপর ১৯ জুন প্রকাশিত কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২৬-এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে ৪র্থ স্থান অধিকার করে, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অনন্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত।

এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও সরকারি র‌্যাঙ্কিংয়েও ডিআইইউ’র অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের এডুর‌্যাঙ্ক অনুযায়ী, ড্যাফোডিল বিশ্বে ৩১১৯তম, এশিয়ায় ১০১১তম এবং বাংলাদেশে ৮ম অবস্থানে রয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২৫-এ এটি ১২০১–১৪০০ ব্যান্ডে অবস্থান করছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ ৩-এ ছিল। কিউএস এশিয়া র‌্যাঙ্কিংস অনুযায়ী, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ২৮০তম। টিএইচই ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংস ২০২৫-এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ৮০১–১০০০ ব্যান্ডে অবস্থান করে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য টিএইচই ইমপ্যাক্ট র‌্যাঙ্কিংস ২০২৪-এ ডিআইইউ বিশ্বের মধ্যে ৩০১–৪০০ অবস্থানে এবং বাংলাদেশে শীর্ষে ছিল। পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে ইউআই গ্রিনমেট্রিক র‌্যাঙ্কিংস ২০২২-এ এটি দেশে ১ম ও বিশ্বে ১৯১তম স্থান লাভ করে। গবেষণা ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই ডিআইইউ। স্কোপাস ইনডেক্সড রিসার্চ আউটপুট অনুযায়ী, ২০২২ সালে এটি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণায় প্রথম স্থান অর্জন করে।

এই অর্জন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, ‘এসব অর্জন আমাদের জন্য অনেক গর্বের। আগে অনেকেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি অর্জনের জায়গা ভাবত। কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পারছে, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিকদের চেয়েও ভালো করছে। বড় পার্থক্য হলো—প্রাইভেটে নিজের খরচে পড়তে হয়, আর পাবলিকে নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদ বলেন, ‘অনেকে ভাবেন এসব আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ের মূল্য নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আবেদন করতে গেলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং অনেক গুরুত্ব বহন করে। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব দেখে—আপনার শিক্ষার মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কেমন।’

চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই সাফল্য গর্বের হলেও বাস্তবে আমরা এখনো নানা বৈষম্যের শিকার। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই হোক বা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে—প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনো অবহেলার চোখে দেখা হয়। সরকার, সমাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একসাথে কাজ করতে হবে যেন সব শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পায়। নইলে এই আন্তর্জাতিক অর্জন দেশ বা শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে খুব বেশি কাজে আসবে না।’

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়—বরং এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা ও সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। এখন সময় এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং কর্মসংস্থানে সমতা নিশ্চিত করার। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাই হতে পারে ভবিষ্যতের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ।