এনএসইউতে ‘বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু আবশ্যক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (এসএইচএসএস) এর উদ্যোগে “নন-এনফোর্সিয়েবল বাট বাইন্ডিং (বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু আবশ্যক)” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টি সেমিনার সিরিজের উদ্বোধনী পর্ব।
এই সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রভাষক নাফিজ আহমেদ। জুরিসপ্রুডেন্স ও আইন দর্শন সম্পর্কিত এই প্রবন্ধে তিনি আলোচনা করেন যে, রাষ্ট্র পরিচালনা বিষয়ক নীতিমালা বিচারিকভাবে প্রয়োগযোগ্য না হলেও তা আইনি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে। তার গবেষণার প্রধান দাবি হচ্ছে আইন দর্শনের আলোকে বিচারিক প্রয়োগযোগ্যতা আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরির জন্য আবশ্যক নয়। বিশ্লেষণী আইন দর্শনের প্রধান জুরিস্ট জন অস্টিন, এইচ এল এ হার্ট, এবং জোসেফ রাজের তত্ত্ব বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি তার অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি জন অস্টিনের তত্ত্ব দিয়ে আলোচনা শুরু করেন, যিনি বলেছিলেন যে, শাস্তিমূলক আদেশের মাধ্যমে আইনি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয় এমন ধারনা ত্রুটিপূর্ণ। এরপর তিনি এইচএলএ হার্ট-এর মতবাদ তত্তের আলোকে ব্যাখ্যা করেন যে, একটি নিয়ম বিচারিকভাবে বলবৎযোগ্য না হলেও তা বাধ্যতামূলক হতে পারে। নিয়ম তখনই বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে যখন তা স্বীকৃতির নিয়ম পূরণ করে; এ কারণে নয় যে তা আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য।
তিনি জোসেফ রাজ-এর তত্ত্বের উল্লেখ করে দেখান, যে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি বা নির্দেশনামূলক নীতিগুলি তাদের ‘এক্সক্লুশনারি রিজন’-এর কারণে প্রয়োগযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ, সাংবিধানিক নির্দেশনা বিচারিক প্রয়োগযোগ্যতার উপর নির্ভর না করেও আইনি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমনভাবে বাংলাদেশ সংবিধান-এর দ্বিতীয় ভাগ “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” যা আদালতের দ্বারা বিচারিকভাবে প্রয়োগযোগ্য না হলেও এসব বাস্তবায়ন করা রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক।
সেমিনারের সঞ্চালনা করেন আইন বিভাগের প্রভাষক মো. লোকমান হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াই আইনি বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। এটি হার্টের তত্ত্বের কিছু অংশকে এগিয়ে নিয়েছে। তবে এই ধরনের বিচারিকভাবে বলবৎযোগ্য নয়, কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে এমন রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে কিছু দেশে সাংবিধানিক নির্দেশনাগুলো আদালতের পরিবর্তে অন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বাস্তবায়িত হয়।’
সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের ডিন ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এই গবেষণাপত্রটি মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে সহায়তা করবে। মানুষ আইনের দ্বারা আরোপিত শাস্তিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে অথচ প্রয়োগযোগ্যতা প্রত্যাহার করলেও আইনের আরোপিত বাধ্যবাধকতা হ্রাস পায় না।’