১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৩

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে নর্থসাউথে গোলটেবিল আলোচনা

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে নর্থসাউথে গোলটেবিল  © টিডিসি ফটো

দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইনকিউবেটরগুলোর ভূমিকা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, ফান্ডিং এবং নীতিগত সহায়তা প্রদানে ইনকিউবেটরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে টেকসই অর্থায়নের অভাব, শিল্প খাতের অসহযোগিতা এবং নীতিগত চ্যালেঞ্জের কারণে এসব ইনকিউবেটরের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই বিষয়গুলো আলোচনার জন্য আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্ল্যাটফর্ম ও এনএসইউ স্টার্টআপস নেক্সট একটি বিশেষ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আবদুর রব খান, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং পার্টনার রাহাত আহমেদ, স্টার্জন ক্যাপিটালের ভেঞ্চার পার্টনার ওয়াইজ রহিম, এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির প্রকল্প পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এছাড়াও ট্রাক লাগবে-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এনায়েত রশিদ এবং আইফার্মারের ফাউন্ডার ও সিইও ফাহাদ ইফাজ তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু
উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা– বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা বাণিজ্যিকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপ গঠনে সহায়তা প্রদান; টেকসই ইনকিউবেটর মডেল – দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন, পরামর্শদান ও পরিচালন কাঠামো গঠনের প্রয়োজনীয়তা; সরকার ও শিল্পখাতের সহযোগিতা – সরকারি সংস্থা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি; আঞ্চলিক স্টার্টআপ সহায়তা– শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে উদ্যোক্তাদের জন্য ইনকিউবেশন সুবিধা সম্প্রসারণ; নীতিগত কাঠামো গঠন– সরকারি সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটরগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি।

মূল বিষয়গুলো আলোচনার সময়, মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার (প্রকল্প পরিচালক, ডিইআইইডি প্রকল্প, বিএইসটিপিএ) মন্তব্য করেন, আজকের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে শিক্ষার্থীদের অবস্থান বুঝতে হলে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা শনাক্ত করাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ধারণাই শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন মনে হয়, শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা আগে সেগুলোর সম্মুখীন হয়নি। প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হল এই জ্ঞানের শূন্যতা পূরণ করা।

আরও আলোচনা ও পর্যালোচনার মধ্যে, রাহাত আহমেদ (প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং পার্টনার, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ) বলেন, ‘একটি শক্তিশালী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য ভারসাম্য প্রয়োজন—দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য নিশ্চিত করতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও অত্যাবশ্যক। বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসরণ না করলে বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারণে ব্যর্থ হবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদের সেরা অনুশীলনগুলো গ্রহণ করতেই হবে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি স্টার্টআপস নেক্সট-এর পরিচালক (ইনচার্জ) স্যামুয়েল মুরসালিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটর শুধুমাত্র একটি সহায়তা কেন্দ্র নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক রূপান্তরের ইঞ্জিন। একাডেমিয়া এবং শিল্পখাতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি যেখানে স্টার্টআপ সফলভাবে বিকশিত হতে পারে এবং উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’

আলোচনার শেষ পর্যায়ে, বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটরের জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপ, সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ এবং একাডেমিয়া-শিল্পখাতের মধ্যে গভীরতর সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করা হয়। এই আলোচনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশ ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই গোলটেবিল আলোচনা, বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গঠনে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।