২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৯

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের পদত্যাগ

অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত  © ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনিসুর রহমান বরাবর এ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের বর্তমান সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আযহারুল ইসলাম গ্রহণ করেন।

পদত্যাগপত্রে শুভময় দত্ত উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম এবং এর ফলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তারা রাজধানীর বনানী এলাকার কামাল আতাতুর্ক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আরও পড়ুন: প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ৩০ কোটিরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ বহিষ্কৃতদের

এ বিষয়ে দিনভর চেষ্টা করেও ড. শুভময় দত্তের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম রোধ এবং অযোগ্য কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের এ সময়ে উচ্চশিক্ষালয়টির এফডিআর ভেঙ্গে ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকাই সরানো হয়েছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে থাকা এফডিআর ভেঙ্গে। বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভ ফান্ড এবং নিয়মিত ফান্ড থেকে এসব অর্থ সরিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব প্রাপ্তরা।

সম্প্রতি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির আর্থিক বিবরণী, আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট হিসাবাদি বিশ্লেষণে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। আর এসব অনিয়মে জড়িত ছিলেন—প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের (বিওটি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান আজাদ টিটু। এর আগে নানা অনিয়মরে অভিযোগে তাঁকে সেখান থেকে অপসারণও করা হয়েছিল। 

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা জমা হয়নি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ফান্ডে

এছাড়াও এ অনিয়মে জড়িত ছিলেন শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানার বান্ধবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রেজারার ড. ইফ্ফাত জাহান, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শুভময় দত্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) শিপার আহমেদ।

আর এসব অনিয়মে অভিযুক্তদের সহায়তা করেছেন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভর্তি ও বিপণন শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ, ক্রয় বিভাগ থেকে পদত্যাগ করা সহকারী পরিচালক নাহিদ হাসান ও সহকারী পরিচালক জুবায়ের সিদ্দিক তানিন।

এছাড়াও এ অপকর্মে সহায়তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন খণ্ডকালীন শিক্ষকও; তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রোগামের অপসারিত শিক্ষক সায়েদ ফেরদৌস মুগ্ধ। তিনি টিটুর ঘনিষ্ঠ এবং বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে ফের নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি!

প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাস, নিরাপত্তা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিসের সাজসজ্জা, পরিষ্কার-পরিছন্নতা, পরামর্শক, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নগদ গ্রহণকালে এসব আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে।

এছাড়াও অনিয়ম করা হয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অসবাবপত্র ক্রয়, বিজ্ঞাপন প্রচার, গাড়ি ক্রয় ও মেইনটেন্যান্স, জ্বালানি ক্রয় এবং বিভিন্ন গবেষণাগারের সামগ্রী ক্রয়সহ নানা খাতে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিগত সাড়ে চার বছরের বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব অনিয়মে জড়িয়েছেন অভিযুক্তরা।