‘বিশ্বসেরা ১ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় থাকতে কাজ করবো’
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনে ব্যতিক্রমী অবদান রাখা শীর্ষ গবেষকদের নাম প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’। বিশ্বজোড়া পরিচিত এলসেভিয়ারের সমন্বিত এ জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৩ জন শিক্ষক।
গবেষকরা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীর্ষ ২ শতাংশ অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিবছর বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘এলসেভিয়ার’ কর্তৃপক্ষ।
‘‘এখানে আর্থিক অবস্থার থেকেও গবেষণা করার মানসিকতা না থাকা বড় ধরনের সমস্যা। সেজন্য উচ্চশিক্ষালয়গুলোয় গবেষণার সংস্কৃতি পরিবর্তন এবং আরও বেশি গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।’’
চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মোট ১৭৭ জন সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
এ বছর শীর্ষ গবেষকদের এ তালিকায় থাকাদের একজন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অফ বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান। তিনি ফিনান্সিয়াল ইনোভেশন অ্যান্ড ইকোনমিতে উচ্চতর গবেষণায় এবারের তালিকায় শীর্ষদের তালিকায় অবস্থান করেন।
ড. মো. কামরুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি চীনের উহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে দেশটির সরকার প্রদত্ত বৃত্তি নিয়ে ফিনান্সিয়াল ইনোভেশন নিয়ে ডক্টর অব ফিলোসোফি (পিএইচডি) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তার ১৪২টি গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন গুণী এই শিক্ষক। সম্প্রতি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে তার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। গল্প-আলাপে গবেষণামগ্ন এই শিক্ষক বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় থাকা আনন্দের ও গর্বের। তবে আমার আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। আমি বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় যেতে চাই।
আরও পড়ুন: বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় ইউআইইউর তিন গবেষক
‘‘আমি গবেষণা করতে ভালোবাসি এবং গবেষণায় থাকতে চাই। আমি ইউআইইউ কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা আমাকে গবেষণা চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহায়তা করেছে। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি; গবেষণা করে যাচ্ছি। ফলে আমি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিষয়গুলো জানানোর সুযোগ পাচ্ছি। এটি তাদের নতুন নতুন বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত করছে।’’
ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি বিগত ৫ বছর ধরে কার্বন নিঃসরণ রোধ নিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছি। এছাড়া আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়েও গবেষণা করছি। আমি ইউআইউ’কে কৃতজ্ঞতা জানাই, আমরা একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছি এবং সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সহায়তা করছে।
চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে তারা ভালো মানের গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে একাডেমিয়ার ভালো সম্পর্ক হচ্ছে—এটি এখানেও করা যেতে পারে। ফলে এখানকার গবেষণার পরিবেশ উন্নত হবে। এছাড়াও এখানে তরুণদের আরও বেশি গবেষণায় এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এমআইটি-হার্ভার্ডের মতো গবেষণাগারের সুযোগ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে
এই গবেষকের মতে, এখানে আর্থিক অবস্থার থেকে গবেষণা করার মানসিকতা না থাকা বড় ধরনের সমস্যা। সেজন্য উচ্চশিক্ষালয়গুলোয় গবেষণার সংস্কৃতি পরিবর্তন এবং আরও বেশি গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্টদের আরও উদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হয় জানিয়ে ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি আমার শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করছি। আমি নিজেও গবেষণা করছি, ফলে শিক্ষার্থীরা উৎসাহবোধ করে এবং তারা গবেষণার বিষয়গুলো জানতে চায়।
গল্প-আলাপের শেষদিকে সামনের দিনে আরও বেশি গবেষণায় সংযুক্ত থাকার কথা জানান ড. মো. কামরুজ্জামান। আগামীর পরিকল্পনা হিসেবে এই শিক্ষক জানিয়েছেন—নিজেকে আগামীদিনে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।