০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৪৯

‘তরুণদের আরও বেশি গবেষণায় আসা উচিত’

ড. শরীফ আহমেদ মুকুল  © টিডিসি ফটো

বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনে ব্যতিক্রমী অবদান রাখা শীর্ষ গবেষকদের নাম সম্প্রতি প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’। বিশ্বজোড়া পরিচিত এলসেভিয়ারের সমন্বিত এ জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৩ জন শিক্ষক।

গবেষকরা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীর্ষ ২ শতাংশ অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিবছর বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘এলসেভিয়ার’কর্তৃপক্ষ।

তরুণদের চলমান বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। বিশেষ করে দেশের বাইরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে—তা নিয়ে তাদের আরও বেশি জানা উচিত। 

চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মোট ১৭৭ জন সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

এ বছর শীর্ষ গবেষকদের এ তালিকায় থাকাদের একজন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের পরিবেশ ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শরীফ আহমেদ মুকুল। বন ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ  এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণার জন্য তিনি এ তালিকাভুক্ত হন। বাংলাদেশে এসব বিষয়ে গবেষণায় ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় নিবন্ধ প্রকাশে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে তিনি একজন।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। ফাইল ছবি।

‘‘আমি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যেতে চাই । ইউআইইউ কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা, তারা আমাকে গবেষণা চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহায়তা করেছে। শিক্ষকতা ও কন্সালটেন্সি'র  পাশাপাশি আমি আমার গবেষণা করে যাচ্ছি। দেশের অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ইউআইইউতে আমরা ভালো মানের গবেষণা করার পরিবেশ পাচ্ছি। এছাড়া আমি শ্রেণিকক্ষে আমার গবেষণার ফলাফলগুলো প্রকাশের আগেই শিক্ষার্থীদের জানানোর সুযোগ পাচ্ছি। এটি তাদের নতুন করে ভাবতে ও বিষয়গুলো নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা ও গবেষণায় উৎসাহিত করছে। এর পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সংযোজন হচ্ছে ।’’

ড. শরীফ আহমেদ মুকুল বলেন, বনভূমির পরিমাণ কম ও অত্যধিক জনসংখ্যা সত্ত্বেও এদেশে উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র কিংবা প্রাণীর সমাহার রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৫৭০০ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ, ৭০০ র মতো পাখি প্রজাতি ও ১২০ এর অধিক স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে প্রাণ-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার গবেষণার বিষয় ছিল—প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা ও সঠিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন কিংবা প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়ন, প্রকৃতিকে ব্যবহার করে জলবায়ু ও দুর্যোগ প্রশমন নিয়ে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার পরিকল্পনা আমার।

আরও পড়ুন: বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় ইউআইইউর তিন গবেষক

বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় থাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস জানিয়ে এই শিক্ষক বলছেন, অর্জন নিজের ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের জন্য বড় অর্জন। আমি দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, করিয়েছি এবং গবেষণা করেছি। ২০২২ সালেও আমি আমার বিভাগে টপ ২% বিজ্ঞানীর অন্তর্ভুক্ত ছিলাম অস্ট্রেলিয়ার সানশাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অস্ট্রেলিয়ায়  টপ ২% বিজ্ঞানীর অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ থেকে সহজ সেখানকার সুযোগ সুবিধা ও সমাজব্যবস্থার জন্য উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় এবছর তাদের জনসংখ্যার প্রতি ৭০০০ জনে একজন টপ ২% বিজ্ঞানীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যেখানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লক্ষ জনে মাত্র একজন এই লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।  

তরুণদের আরও বেশি গবেষণায় আসা উচিত জানিয়ে ড. শরীফ আহমেদ মুকুল বলেন, তরুণদের চলমান বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। বিশেষ করে দেশের বাইরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে—তা নিয়ে তাদের আরও বেশি জানা উচিত। 

গল্প-আলাপের শেষদিকে সামনের দিনে আরও নতুন বিষয়ে গবেষণায় সংযুক্ত থাকার কথা জানান ড. শরীফ আহমেদ মুকুল। আগামীর পরিকল্পনা হিসেবে এই শিক্ষক জানিয়েছেন—আরও বেশি গবেষণাকর্মে যুক্ত থাকতে চান তিনি। সেজন্য এই গবেষকের প্রত্যাশা শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আরও বেশি গবেষণার সুযোগ ও পরিবেশ।