আওয়ামী লীগ দখলমুক্ত হলো আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পর এবার আওয়ামী লীগ দলীয় সিন্ডিকেট থেকে দখলমুক্ত হলো আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় রাহুমুক্ত হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এবার সগৌরবে এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। শ্বেতপত্র প্রকাশ হবে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের।
এসব নিয়ে কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লায়ন মো. মুজিবুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সভায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় কক্সবাজারকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন থেকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ৭ বছরের রেকর্ড খুবই চমকপ্রদ ছিল। মাঝপথে এসে ২০২০ সালে একটি অবৈধ দখলবাজ চক্র কক্সবাজারবাসীর এ সম্পদকে লুটেপুটে খাওয়ার মিশনে নামে। আওয়ামী লীগ নেতা সালাহ উদ্দীন আহমদের (মাছ সালাহ উদ্দীন) নেতৃত্বে একটি দখলদার গোষ্ঠী বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক দলের অফিস বানিয়ে নেয়। যে কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের ক্যাম্পাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ঠিক এমন দুঃসময়ে দেশের ছাত্র-জনতার স্বত:স্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অবশেষে ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহ্বানে আমি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরি।
লায়ন মো. মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ইউজিসির সুষ্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও তার কোনো তোয়াক্কা করেনি সালাহ উদ্দীন সিন্ডিকেট। ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিয়েছে আর ছাঁটাই করেছে। নামে বেনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা তছরুপ করেছে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করেছে। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির তদন্তে ইউজিসি থেকে কক্সবাজারে একাধিকবার টিম আসে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, দখলদার সালাহউদ্দীন আহমদ, ভিসি ড. গোলাম কিবরিয়া ও আ. ক.ম গিয়াস উদ্দীন মিলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চালিয়েছে। যার শ্বেতপত্র শিগগির প্রকাশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমি পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার তথা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির’ প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি। ২০২০ সালের ২ জুন আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দীন আহমদ অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করেন। এরপর তিনি ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। বিগত ১৫/০৯/২০১৩ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এবং ৬/১০/২০১৩ ইউজিসি কর্তৃক আমার নামে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের চিঠি প্রাপ্ত হই। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৭ বছর যাবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে আমার বরাবরে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সম্বোধন করে বিভিন্ন সময়ে পত্র আদান-প্রদান হয়। অপরদিকে খোদ সালাহ উদ্দীনও দীর্ঘ ৭ বছর যাবত আমাকে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সম্বোধন করে বিওটির সভা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন, যা সকলে অবগত আছেন।