৫০ হাজার টাকায় দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন তারা
প্রায় দুই বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘সিটি ইউনিভার্সিটি’ ও ‘আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’র নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে আসছিলেন আবু জাফর (৩১)। তার অন্যতম সহায়তাকারী বন্ধু মাসুদ। মূলত এই মাসুদই তাকে নকল সার্টিফিকেট তৈরি ও বিক্রির পথ দেখিয়ে দেন। লোভে পড়ে জাফর শুরু করেন নকল সার্টিফিকেট তৈরির কাজ। প্রতি সাটিফিকেট তৈরিতে নিতেন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা।
তাদের কাছ থেকে এসব নকল সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকে দেশের বাইরে পড়াশোনা ও চাকরি করতে গেছেন। কিন্তু সেই সব দেশ থেকে যখন সার্টিফিকেটগুলো আসল কিনা জানতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তখনই চোখ ছাড়াবড়া। কারণ এই ছাত্রদের তারা কখনোই সার্টিফিকেট তুলে দেননি। তাহলে কে করল এমন কাজ!
গত মে মাসের শেষের দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। সেই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) টিম জাফরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
আজ রবিবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবির হারুন বলেন, গ্রেফতার জাফর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সার্টিফিকেট ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। জাফর ও তার বন্ধু (পলাতক) মাসুদ মিলে শতাধিক নকল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে।
ডিবি বলছে, সিটি ও আমেরিকা ইউনিভার্সিটির নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রি করতেন জাফর ও তার সহযোগী মাসুদ। ওই চক্রের সঙ্গে আইটি বিশেষজ্ঞ জড়িত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির একজন সাবেক শিক্ষক ও অফিস সহকারী জড়িত।
কে এই জাফর?
ডিবি জানিয়েছে, জাফর ২০১১ সালে পাবনা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকায় এসে মিরপুরে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। পরে ২০২০ সালে গার্মেন্টেসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শীতের সোয়েটার এবং থ্রি-পিচ বিক্রি শুরু করেন। এর মাঝে ২০২৩ সালে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে দালাল কাইয়ুমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তখন থেকেই তিনি এনআইডি, পাসপোর্ট সংশোধন ও তৈরির কাজে জড়িয়ে যান।
সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নিশাত রহমান মিথুন জানান, ২০২৩ সালে জাফরের বন্ধু মাসুদ নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রির প্রস্তাব দেন তাকে। পরে দুজন নকল সার্টিফিকেট বিক্রির কাজে জড়িয়ে পড়েন। গত মে মাসে সুমন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সিটি ইউনিভার্সিটির নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে বাড্ডা এলাকার এক ব্যক্তির কাছে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। জাফরের বন্ধু মাসুদ আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির দুটি নকল সার্টিফিকেট তৈরি করে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন মালয়েশিয়া প্রবাসী দুজন ব্যক্তির কাছে। দ্য কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির নকল সার্টিফিকেট নিজে প্রাইভেট চাকরির জন্য তৈরি করেন জাফর। এছাড়া তিনি ও তার বন্ধু মাসুদ মিলে শতাধিক নকল সার্টিফিকেট বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে বিক্রি করেছেন।
গত ২৬ মে তেজগাঁও থানায় নকল সার্টিফিকেটের বিষয়ে একটি মামলা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর মীর শওকত আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জাফরকে গ্রেফতার করা হয়।