জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন কমেছে: ইউআইইউতে ড. আইনুন নিশাত
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশ খুব ভালো নীতিমালা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশে এ পরিবর্তন মারাত্মক হয়েছে। এখানে বর্ষা পূর্ববর্তী এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। ফলে এখানে খাদ্য উৎপাদন কমেছে। সেজন্য আমাদের খাদ্য আমদানি বেশি করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত।
আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) কর্তৃক আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত—শীর্ষক আলোচনা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ইউআইইউর স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের উদ্যোগে উচ্চশিক্ষালয়টির ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশ কর্পাস: পাবলিক লেকচার সিরিজ-২০২৪’ এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমেছে জানিয়ে ড. নিশাত বলেন, জুন এবং জুলাইয়ে মূল বর্ষায় বৃষ্টি হলেও বর্ষা পূর্ববর্তী সময়ে বগুড়া এবং পাবনা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলে শস্য উৎপাদন কম হয়েছে। ফলাফল আমাদের খাদ্য আমদানি বাড়াতে হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এসব এলাকায় পানির লবণাক্ততা বেড়েছে। এখানকার জীববৈচিত্র্যে নানা পরিবর্তন ও সংকট তৈরি হয়েছে। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলেছে এ পরিবর্তন—বলেন ড. আইনুন নিশাত।
বৈশ্বিক নানা প্রেক্ষিত তুলে ধরে প্রবীণ এই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকার জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন উদ্যােগের কথা বলছেন। তাদের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সবসময়ই থাকে। এটি বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য সংকট, অভিবাসনের হুমকি; জীবিকার নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধি, অনিশ্চিত আচরণ এবং সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তা; জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকি, টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া প্রভাবিত এবং পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর কম প্রস্তুতির ফলে সংকট মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য এসব সংকট সমাধানে কাজ করতে হবে।
সমাধান হিসেবে ড. নিশাত আটটি মৌলিক সমাধানে জোর দেন। তিনি বলেন, প্রশমন, অভিযোজন, অর্থায়ন, প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশমন এবং অভিযোজনে বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য এবং স্বচ্ছতা প্রক্রিয়া নিশ্চিতের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ব্যাংককের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এটিএম নুরুল আমিন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং সৃষ্ট সংকট উত্তরণের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া এবং স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের (এসওবিই) ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।