আইন ভেঙে ভিসি অপসারণের কারণ দর্শাতে হবে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টিদের
আইন ভেঙে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসিকে অপসারণ করার ঘটনায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি শোকজের চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিওটির কাছে পাঠানো হবে। রবিবার (২৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) একাধিক সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একজন উপাচার্যকে নিয়োগ বা অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলরের। তবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির বিওটি। বিষয়টি ইউজিসির দৃষ্টিগোচর হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হবে। তাদের জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ চার বছরের জন্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হককে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেন৷ সে হিসেবে আগামী বছরের ১ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মোজাম্মেল হককে জোরপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
গত ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মেম্বার সেক্রেটারি সরওয়ার জাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হককে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে ভিসির চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হককে তাঁর দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি (সাসপেনশন) দেওয়া হয়েছে। গত ২০ এপ্রিলে এই সিদ্ধান্ত সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির নীতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী ৭৭তম বোর্ড অফ ট্রাস্টির সভায় সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়, যা ২১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।
“অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপ থেকে এই ইউনিভার্সিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী কোন এক কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিলেন। তাঁর বিভিন্ন কার্যক্রম আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছিল তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে, সকলকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি-ধমকির মাধ্যমে এক অপ্রীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। বারবার অনুরোধ করার পরও, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে অবৈধ নিয়োগকৃত রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে ক্রমাগত বিরতিহীনভাবে মিথ্যা অভিযোগ প্রদান, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেই চলেছেন দুদকে অভিযোগ ইত্যাদি ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। একটি কারণ দর্শানোর চিঠি ইস্যু করা হয়েছে এবং জবাব প্রাপ্তির সাপেক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।”
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় চলমান রাখতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩১(৬)অনুযায়ী ট্রেজারারকে ভিসি দপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম উপাচার্য (চলিত দায়িত্ব) পালন করার জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় । সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির বর্তমান অবস্থা আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে অবহিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ বলা হয়েছে, সুষ্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কোন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সুপারিশক্রমে ভিসিকে অপসারণ করতে পারবেন চ্যান্সেলর। তবে শর্ত রয়েছে, অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ভিসিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করতে হবে। তবে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হককে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় এই আইন মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।