১২ মে ২০২৪, ২১:২০

শিক্ষায় অংশগ্রহণ বেড়েছে, গুণগত মান বাড়েনি: ইউআইইউতে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান  © সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, শিক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু গুণগত মান বাড়েনি। এখন দেশে শিক্ষা পাওয়া সহজ হয়েছে। কিন্তু এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেড়েছে এবং পাশাপাশি মানও নিচের দিকে যাচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া উচিৎ এবং শিক্ষায় মন বাড়ানো উচিত। 

রবিবার (১২ মে) বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) আয়োজিত 'মধ্যম আয়ের স্বপ্নকে গন্তন্তীকরণের চ্যালেঞ্জ'—শীর্ষক আলোচনা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ইউআইইউ'র স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের উদ্যাোগে উচ্চশিক্ষালয়টির ক্যাম্পাসে 'বাংলাদেশ কর্পাস: পাবলিক লেকচার সিরিজ-২০২৪ এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে। 

বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হলেও বৈষম্য বেড়েছে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আয় এবং কর্মসংস্থান না বাড়ায় বৈষম্য বাড়ছে। এটি জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং তা নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একইসাথে নিরাপত্তাহীনতা এবং ঘুষ বাড়ছে। পাশাপাশি এটি মেধা পাচারকে উৎসাহিত করছে বলেও জানান তিনি। 

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ছয়টি ক্ষেত্রে রূপান্তরমূলক অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রাম ও শহরের সংযোগ, বিশ্ব অর্থনীতিতে একীকরণ এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ। বিপরীতে উন্নয়নের যে চিত্রায়ণ করা হয়েছে তা বাস্তবতা-ভিত্তিক উন্নয়ন বক্তৃতাকে সমর্থন করেনি। এছাড়াও নীতি ও সমাধান চিন্তা বাস্তবভিত্তিক হয়নি। যা পরিবর্তনকে কম গতিশীল করেছে। 

দেশের নানা পরিবর্তনের সূচক বিচার করে তিনি বলেন, ১৯৯০ এর দিকে বাজার অর্থনীতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজনীতি এবং জবাবদিহির চাপ, শক্তিশালী নীতি উদ্যোক্তা গতিশীল সামাজিক খাত বড় ভুমিকা রেখেছে। বিপরীতে ২০১০ এর দিকে এসে তীব্র বৈষম্য, প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদ এবং মেধাতন্ত্রের উপর বিপরীতমুখীতা, সামাজিক খাতে গুনগত পরিবর্তন না হওয়া, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বিপরীতমুখী অবস্থান এবং প্রান্তিক রাজনীতিতে বিরোধিতা প্রকট হয়েছে। ফলে মধ্যম আয়ের স্বপ্ন পূরণ কঠিন হয়েছে। 

কোভিড এবং মুদ্রাস্ফীতির এ সংকটকালকে 'রাজনৈতিক নতুন স্বাভাবিক' সময় উল্লেখ করে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এতে আমাদের চাকরির সংকট এবং যুবকদের হতাশা বেড়েছে। নতুন গরীব অর্থাৎ তারা গরীব নয় কিন্তু সক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। এছাড়াও প্রজন্মের শক্তিক্ষয়, দূর্নীতি ইত্যাদি আমাদের সংকটকে আরও প্রকট করেছে। 

সম্পদ ছাড়া রূপান্তর, অনিশ্চয়তার সাথে স্থিতিশীলতা আমাদের একটি ধাঁধার মধ্যে ফেলেছে জানিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, অর্থনৈতিক চলমান শাসনে চলা বর্তমান মডেল 'সস্তা শ্রম অর্থনীতি'কে স্থায়ী করবে, মানসম্পন্ন মানবিক পুঁজি এবং সামাজিক অবকাঠামোতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না করে, জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সংক্ষিপ্ত সুযোগ অতিক্রম এবং আর্থিক বৈষম্য সামাজিক গতিশীলতা এবং মধ্যবিত্তের স্থায়িত্বকে সংকটে ফেলবে। 

চলমান এ সংকটের সমাধান হিসেবে তার পরামর্শ সম্মিলিতভাবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ-অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনা দিতে পারে। সেজন্য সবাইকে একসাথে সংকট মোকাবেলায় কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। একইসাথে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমর্থন পেলেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি। তার মতে, এটি আপাতত স্বপ্ন, এ সময়ের জন্য। আমাদের সামনের দিনগুলোর জন্য আরও বেশি স্বপ্ন দেখতে হবে।

আমাদের উন্নতিগুলো বাস্তবতাকে ছুঁয়ে করা হয়েছে জানিয়ে ড. জিল্লুর বলেন, আমরা ২০০৫ এর দিকে প্রথম একটি কর্মশালায় 'সামাজিক নিরাপত্তা' শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করি। এটি এখন জাতীয় পলিসিতে রূপ নিয়েছে এবং মানুষ তার সুফল গ্রহণ করতে পারছে। এর আগে এটি শুধুমাত্র কিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ ছিল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা এবং ইউআইইউ'র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া এবং স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের (এসওবিই) ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন এসওবিই'র সহযোগী অধ্যাপক ড. ওয়াহিদা ইয়াসমিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।