বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন স্ট্যামফোর্ডের সাগর
আগামী ১ থেকে ৭ মার্চ রাশিয়ার সিরিয়াস ফেডারেল টেরিটরিতে (সোচি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব যুব উৎসব বা ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল। এই উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ সাগর।
সাগরের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমলায়। মা মোছা. মাহফুজা বেগম মারা যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবা মো. সামসুল হকই সাগরের একমাত্র ছায়া।
সাংবাদিকতায় পড়ার ইচ্ছা থেকে ভর্তি হন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে। পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বাংলানিউজে যোগ দেন। এরপর থেকে শুরু সাগরের নতুন অধ্যায়। বাংলানিউজের হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদের কাজ করেন। বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে গিয়েছেন দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থানে। কাজের বিষয়ও বহুমাত্রিক। এক কথায়, রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বভুক।
২০১৯ সালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক শেষ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় সাগর সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৃজনশীল লেখালেখি এবং সামাজিক কাজের সঙ্গেও দারুণভাবে সম্পৃক্ত। তিনি ২০২১ সালে ইস্পাহানি মির্জাপুর চা আয়োজিত গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।
বর্তমানে দেশের কৃষি ও জলবায়ু বিষয়ক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম সামাজিক সংগঠন ‘কৃষকের বাতিঘর’ এর উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সংগঠনটি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রামে’ বিশ্বের ৯৫টি দেশের সাত হাজার ৮৯২টি সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে প্রথম ৪০০তম স্থান পেয়েছে। এছাড়া তিনি মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে মঞ্চ নাটকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।
ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ নিয়ে সাগর বলেন, এই উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার বিশ্বাস, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুব নেতা ও ডিপ্লোম্যাটদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আমি নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব। এছাড়া এই উৎসব বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বিশ্ব দরবারে আমার দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে। আমি বিশ্বাস করি, এই উৎসবের মাধ্যমে বিশ্বের যুব সমাজ একত্রিত হতে পারবে এবং বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারবে।
রাশিয়ায় আয়োজিত এ উৎসবে এবার বিশ্বের ১৮০টি দেশের ২০ হাজার যুব প্রতিনিধি ও ডিপ্লোম্যাট অংশ নিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশ থেকে সাগরের সাথে অংশ নিচ্ছেন আরও ৯৪ জন।
তারা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এই ৯৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৩২ যুব প্রতিনিধি বিশ্ব যুব উৎসবের মূল প্রোগ্রাম শেষ করে অংশ নেবেন রুশ সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণ হিসেবে এই উৎসবের আরেক আয়োজন রিজিওনাল প্রোগ্রামে। এই আয়োজনে সমগ্র বিশ্ব থেকে মোট দুই হাজার যুব প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
৭ মার্চ উৎসবের মূল প্রোগ্রাম শেষে যখন সবাই দেশে ফিরবেন, তখন রিজিওনাল প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে সাগরসহ বাংলাদেশের ৩২ জন যুব প্রতিনিধি রাশিয়ার ত্রিশটি অঞ্চলে একটি ফ্রি ট্যুর পাবেন। এই ট্যুরটি ১৭-১৮ তারিখ মস্কোয় এসে শেষ হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে তারা দেশে ফিরবেন।
এর আগে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এই অংশগ্রহণকারীরা উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন। সেখানে তারা নিজেদের কর্মদক্ষতা, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ, সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তি, সামাজিক কার্যক্রম ও শিক্ষাগত যোগ্যতাগুলো তুলে ধরেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেন।
সেখান থেকে তাদের সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ বিচারকগণ বৈশ্বিকভাবে মার্কিং করেন। এরপর পয়েন্টের ভিত্তিতে তাদের অংশগ্রহণ, ফুল ফান্ডেড ট্রিপ, রিজিওনাল প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া এবং পার্শিয়াল ফান্ডের বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়। এই আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য এবার বিশ্বের ১৮৮টি দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি আবেদন জমা পড়ে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বাংলাদেশের তরুণ যুব নেতা হিসেবে রাশিয়ার ‘নিউ জেনারেশন প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের সুযোগ পান। সে সময় তিনি মস্কোয় নিউ জেনারেশন প্রোগ্রাম এবং অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব যুব উৎসব কীভাবে আরও সুন্দর করা যায় এবং তরুণদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করা যায়, তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ১২ দেশের ৪৮ তরুণ নেতাসহ রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে তার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।