শুধু পেশাগত জীবনের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নয়: আইনুন নিশাত
শুধু পেশাগত জীবনের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু যে আপনাকে পেশা জগতে প্রবেশ করাবে তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে জীবনের জন্যও তৈরি করবে। সৎ পথে চলতে শেখাবে, প্রতিবেশীকে ভালোবাসতে শেখাবে, গুরুজনদের সেবা করতে শেখাবে আর দেশকে ভালোবাসতে শেখাবে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৭ম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস নির্ভরতা থেকে বের হওয়ার আহবান জানিয়ে অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকালীন যে কর্মকাণ্ড সেটাকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সিলেবাসের ভিত্তিতে পড়াশোনা করলে চলবে না। এর বাইরেও অনেক বিষয়ে নিজেদের দখল আনতে হবে। আমি মনে করি, সোশ্যাল সাইন্সেও ব্যবহারিক অনেক বিষয় আমাদের জানা দরকার। তাহলে আমাদের সমাজকে আরও ভালো জায়গায় নিতে পারবো। আপনি একজন ভালো মানুষ হতে পারেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক এই অধ্যাপক আরও বলেন, তথাকথিত আধুনিকায়নের নামে সমাজ যেন কেমন বদলে যাচ্ছে। এটা আমার একদম পছন্দ হয় না। আমাদের ধর্মে পরিষ্কার বলা আছে যে, বৃদ্ধ বয়সে তোমার পিতা-মাতার প্রতি তোমার ব্যবহার এমন হবে যাতে তারা কষ্ট পেয়ে ‘উফ’ শব্দ উচ্চারণ করতে না পারেন।
“অথচ আমাদের দেশের কতটা দুঃখজনক ব্যাপার যে, আইন করতে হচ্ছে ছেলে-মেয়েরা যেন তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখভাল করে। আমি প্রায় খবরের কাগজে পড়ি বৃদ্ধা মা-বাবাকে গোয়াল ঘরে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। কি লজ্জার ব্যাপার। এ ধরনের আচার-আচরণ কোনো সমাজের জন্যই কাম্য নয়।”
“তাই আমি সংক্ষেপে বলতে চাচ্ছি, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আর এই দায়িত্ব হচ্ছে পিতা-মাতার প্রতি, পরিবারের অন্য সদস্যের প্রতি এবং প্রতিদেশীর প্রতি। তদপুরি দায়িত্ব হবে জাতির জন্য।”
অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমি জানি, ইথিকস বিষয়ে ইউজিসি খুবই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। একইসঙ্গে তারা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে জোর দিতে বলেছে। আধুনিক সময়ে সমাজে ইথিকাল কর্মপন্থার বড়ই অভাব। আমি ব্যক্তিগতভাবে পেশায় একজন প্রকৌশলী। আমার পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে সততার অভাব আমাকে বড়ই লজ্জা দেয় এবং পীড়া দেয়।
“আজকে লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে, দেশের সকল পেশায় সততা, দেশপ্রেম ও ইথিকাল ব্যবহারের বড়ই অভাব। এ বিষয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তেমন কিছু করছে বলে আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামীতে যদি এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করে থাকে, আমি মনে করি সমগ্র জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা না থাকলে শুধু উচ্চশিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সফট স্কিল, মূল্যবোধ এবং ভাষা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বৈশ্বিক নাগরিক হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে দেশের সামাজিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে নবীন গ্র্যাজুয়েটদের কাজ করার আহবান জানান।
এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য চারজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা এবং ইউআইইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।