২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৩৮

নর্থ সাউথের ছাত্রের মৃত্যু, শেষ মুহূর্তে পাঠানো ‘মেসেজ’ ঘিরে রহস্য

নর্থ সাউথের লোগো ও নিহত ডায়মন্ড  © সংগৃহীত

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) শিক্ষার্থী আবির মাশরুর ডায়মন্ডের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার বন্ধুকে পাঠানো ক্ষুদে বার্তা, প্রেমিকার সাথে কথোপকথন, বাড়ির গেট খোলার চেষ্টা এবং চেহারায় আতঙ্কগ্রস্তভাব ধোঁয়াশা সৃষ্টির মূল কারণ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাভারের বিরুলিয়ার খাগান এলাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) পাশের আবদুল জলিলের ভাড়া বাড়ির কাছে আবিরের মরদেহ পাওয়া যায়। একটি ভবনের পাঁচতলা থেকে নিচে পড়ে ডায়মন্ডের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

নিহত আবিরের বাড়ি বগুড়ার লতিফপুর এলাকায়। সে স্থানীয় মিজানুর রহমানের ছোট ছেলে। সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) সম্পন্ন করেছেন তিনি।

আবিরের বাবা মিজানুর জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজে রাত ১টা ৩ মিনিটের দিকে নিচতলার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আবির গেট দিয়ে বাসার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গেটে তালা থাকায় বের হতে পারেননি। তখন তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল।  

‘এরপর ভবনের নিচতলার আরেকটি ফ্ল্যাটে কলিং বেল চাপেন। কোনো সাড়া না পেয়ে কিছু সময় পর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যান। কেউ হয়তো আমার ছেলেকে ভয় দেখিয়েছে। তা না হলে কেন তার মুখাবয়ব আতঙ্কগ্রস্ত থাকবে?’

ডায়মন্ডের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবা শবনম নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল ডায়মন্ডের। তবে এই সম্পর্কে চির ধরেছিল। ঘটনার রাতে ডায়মন্ড সর্বশেষ দুটি ফোনকল করেছিল তার প্রেমিকা সাবাকে। এছাড়া সাবার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ মেসেজেও কথা হয়েছে ডায়মন্ডের। যদিও সাবা দাবি করেছে, ডায়মন্ড তাকে কল করলেও তার সাথে কথা হয়নি।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ডায়মন্ডের এক বাল্যবন্ধু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ঘটনার রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে ডায়মন্ড আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছিল। মেসেজ লেখা ছিল ‘in the end, you will stop continuing’। সাবার সাথে কথা বলার পরই ডায়মন্ড এই মেসেজ পাঠিয়েছিল বলেও জানান তিনি।

সাভারের যে বাসার নিচ থেকে আবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে চারজন একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তারা হলেন– ফাহমিদুল ইসলাম ফুয়াদ, আবু তালহা, রুহুল ইসলাম জয় ও রাসেল আহমেদ। তারা সবাই ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি বগুড়া।

ফ্ল্যাটের চার বাসিন্দার মধ্যে দু’জনের বাবা পুলিশ কর্মকর্তা। ওয়াছি নামের একজনের মাধ্যমে ওই ফ্ল্যাটের অন্যদের সাথে পরিচয় হয় ডায়মন্ডের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই বসুন্ধরার বাসা থেকে ওই বাসায় নিয়মিত যেতেন ডায়মন্ড।  

নিহত ডায়মন্ডের বড় ভাই আসিফ শাহরিয়ার জানান, শুক্রবার সকালে ডায়মন্ডের কয়েকজন বন্ধু ফোন করে জানায়, ডায়মন্ড ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গেছে। এরপর আমরা ঢাকায় গিয়ে তার লাশ পাই। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে সেদিনই তার লাশ দাফন করা হয়। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর আসল কারণ জানতে চাই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, নিহত ডায়মন্ডের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কোনো আলামত পাওয়া গেলে মামলার ধারা বদল হবে।