১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫৬

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী বেড়েছে ১০ শতাংশ

ইউজিসি লোগো ও ও শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষালয়গুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মাঝে ২০১৯ ও ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেলেও ২০২২ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এ ধারাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে। ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কমছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে পারলে বেসরকারিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ১০৭। সেখান থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৮। এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে ৩০ হাজার ৯৯১। শতকরা বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল।

মহামারির পর এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভালো। বেসরকারিতে শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে পারলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

২০২১ সালে দেশে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ১০৭। সেখান থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৮। এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে ৩০ হাজার ৯৯১।

ইউজিসির ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালে সংখ্যা কিছুটা কমে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পায়। তবে ২০১৯ সালে কমে। এরপর ২০২০ সালে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালে আবার কমে। সবশেষ ২০২২ সালে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে শিক্ষার্থী সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। এ বছর নর্থ সাউথে মোট শিক্ষার্থী ছিল ২২ হাজার ৭৫৪। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল ১৯ হাজার ৬০৭ জন, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৩৭৫ জন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৯১ জন ছিল। আর সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী ছিল ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজিতে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৪৩ জন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথা সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে আগ্রহ দেখায় জানিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম. লুৎফর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান ঠিক রাখতে পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে।

ইউজিসির প্রতিবেদনে দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই।

আরো পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল দুপুরে

ইউজিসি বলছে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বা ইনডেক্সড জার্নালে (হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল/কিউ-১/কিউ-২/স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে) প্রকাশিত হওয়া জরুরি। মানসম্মত প্রকাশনায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারে।

এছাড়া র‌্যাংকিং চালুর জন্য সূচক নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথাও ইউজিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে উক্ত র‍্যাংকিং পদ্ধতি প্রবর্তিত হতে পারে। এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে।

এছাড়াও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক যোগান বাড়াতে কমিশন কর্তৃক প্রণীত এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-৩০ অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‍্যাংকিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশও জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।