২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৮

আন্দোলনকারীদের দাবি মানেনি কর্তৃপক্ষ, সারাদেশে ব্র্যাক বয়কটের ডাক

আন্দোলনকারীদের ব্রিফিং  © টিডিসি ফটো

দুই দফা দাবিতে মেনে না নেওয়ায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সারাদেশে ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে মূল ফটকের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষে মারুফ রহমান এ ঘোষণা দেন।

এসময় তিনি বলেন, আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়নি। তাই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সারাদেশ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বয়কটের (প্রতিষ্ঠানটির সকল পণ্য ও সেবা) ডাক দিলাম।

এর আগে দুপুর ১২টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্য ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্পষ্ট অবস্থান কী তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানোর দাবিতে মূল ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। প্ল্যাকার্ডে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন, ‘শরিফ থেকে শরিফা মানিনা মানবো না’, ‘আমাদের এই বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’ ‘ট্রান্সজেন্ঠার আর হিজড়া এক না, এক না’,  ‘নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘তোমার আমার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’, ‘নো টু রেইবো টেরোরিস্ট’, ‘ডাচ ব্র্যাক সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ ? উই ব্র্যাকিয়ানস ডোনট সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ‘. উই ডো নোট প্রমোট এলজিবিটিকিউ‘, ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে লড়াই করবো একসাথে‘ ‘আমার সোনার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই‘ এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীর।  

পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে কয়েকজন এসে আন্দোলনকারীদের ভেতরে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তারা রাজি হয়নি। এসময় আন্দোলনকারীরা নানান স্লোগান দিয়ে সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এদিকে, বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় বসেন। এসময় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন। এসময় বাকি শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনায় দাবি দুটির পক্ষে ও বিপক্ষে সন্তুষ্টিমূলক কোনো জবাব দিতে পারেনি। অর্থাৎ, দাবি দুটি নিয়ে মাঝামাঝি অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ কারণে সবার সঙ্গে (শিক্ষার্থী) আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা হয়েছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে সরে যায়।

এদিকে দুপুরে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসিফ মাহতাব স্যারের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। আন প্রফেশনালিজম দেখিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে চাই, বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ হোক আর ট্রান্সজেন্ডার হোক কোনো কিছুর ঠাঁই নেই। ট্রান্সজেন্ডার সকল ধর্মের কাছে অবৈধ, বাংলাদেশের আইন অনুয়ায়ী এটা বৈধ না। যারা এটা বৈধতার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা লড়াই করবো। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যারা স্বাধীনতার নাম দিয়ে মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে তারা দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে। ব্র্যাক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত সমকামিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন,  এটা মানসিক অসুস্থতা। ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজড়া এক জিনিস নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কি তা আমরা জানতে চেয়েছি।