২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৭

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

নতুন পাঠ্য বইয়ের একটি পাঠের আলোচিত বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা এবং সমালোচনার প্রেক্ষিতে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনজন প্রতিনিধি উচ্চশিক্ষালয়টির নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে এ আলোচনায় বসেন।

শিক্ষার্থীদের তিন সদস্যের এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাসির মামুন। এর আগে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান করে।

‘ব্রাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কমিউনিটি’র নামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুদফা দাবির জানায় এবং তা না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় নবনির্মিতি ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়ামের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ উন্মুক্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেখানে বাইরের কোনো আন্দোলনকারী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার কোনো সুযোগ নেই বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাঠ্যবইয়ে শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্প ইস্যুতে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ব্র্যাক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে—তার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট  অবস্থান কী—তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানো। এ বিষয়ে প্রশাসন যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বন্ধ ও ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এর আগে নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু অন্তর্ভুক্ত এবং বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুতের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

মানববন্ধনে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। প্ল্যাকার্ডে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি উল্লেখ করেন, ‘শরিফ থেকে শরিফা মানিনা মানবো না’, ‘আমাদের এই বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’ ‘ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া এক না, এক না’,  ‘নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘তোমার আমার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই’, ‘নো টু রেইবো টেরোরিস্ট’, ‘ডাচ ব্র্যাক সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ ? উই ব্র্যাকিয়ানস ডোন্ট' সাপোর্ট এলজিবিটিকিউ‘. উই ডো নোট প্রমোট এলজিবিটিকিউ‘, ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে লড়াই করবো একসাথে’ ‘আমার সোনার বাংলায় ট্রান্সজেন্ডারের ঠাঁই নেই‘ এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীর।

আরও পড়ুন: ব্র্যাকের বিরুদ্ধে ট্রান্সজেন্ডারে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ প্রমাণ হলো: আসিফ মাহতাব

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসিফ মাহতাব স্যারের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। আন প্রফেশনালিজম দেখিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে চাই, বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ হোক আর ট্রান্সজেন্ডার হোক কোনো কিছুর ঠাঁই নেই। ট্রান্সজেন্ডার সকল ধর্মের কাছে অবৈধ, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এটা বৈধ না। যারা এটা বৈধতার জন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা লড়াই করবো। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব।

তখন তিনি বলেছিলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।

এ শিক্ষককে ব্র্যাক থেকে চাকরিচ্যুতের খবর প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় সমালোচনা। এর মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তারা বলেছে, চাকরি হারানো খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই।