নর্থ সাউথের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের (সিপিসি) উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া হয়নি ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইসলামের। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই অনুষ্ঠানে হোচিমিনের সেশনটি বাতিল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হোচিমিন নিজেই।
গতকাল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভালের এ অনুষ্ঠান আজ শনিবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিরোস ফর অল (এইচএফএ) ও আই-সোশ্যাল। নেটওয়ার্কিং, লার্নিং এবং পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চারজন নারী অধিকার কর্মীকে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইসলাম ছাড়াও ছিলেন ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড উইমেন অন্ট্রপ্রোনারশিপ ইউনিটের সিনিয়র ম্যানেজার কাশফি বিনতে আহমেদ, আজিমুর রোকিয়া রহমান ট্রাস্টের ফাইজা রহমান ও উদ্যোক্তা জেরিন মাহমুদ হোসেন।
হোচিমিনের সেশন বাতিলের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, এ অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইসলামের আমন্ত্রণের বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে না আনার বিষয়ে মতামত জানান। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হোচিমিনের বিপক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। পরে তাদের দাবির মুখে হোচিমিনের সেশন বাতিল হয়ে যায়।
তবে এ অনুষ্ঠানে হোচিমিন ইসলামকে নিয়ে আসার সব চেষ্টাই করেছেন আয়োজকরা। হোচিমিন জানান, শুরু থেকে অর্গানাইজারদের সাথে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ আমাকে নিষিদ্ধ করতে চায়। আর অর্গানাইজাররা যেকোনো মূল্যে আমাকে ইভেন্টে রাখতে চায়। একটা সময় আমি বুঝতে পারি আয়োজকরাও চাপের মধ্যে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠানে আমার আর যাওয়া হয়নি।
উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভালে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ
তিনি আরও বলেন, আমি এ ধরনের মার্জিনালাইজড মানুষগুলোকে নিয়ে কাজ করার জন্য দেশে ফিরে এসেছিলাম। এখানে আমি কোনোদিন কোনো ধর্মকে অবজ্ঞা করিনি। ধর্মকে কটূক্তি করিনি। আমার জন্মও একটা মুসলিম পরিবারে। আমাদের পরিবারের মানুষরাও ধার্মিক।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ও ডিন ড. হেলাল আহাম্মদ এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিয়েনেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন এনএসইউ এসবিএ ও সিপিসির সমন্বয়ক এবং প্রভাষক হামিদা মোশাররফ মোনিয়া। অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক পার্টনার হিসেবে ছিল এনএসইউ এইচআর ক্লাব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম ইসমাইল হোসেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষমতায়নের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ আলোচনা করেন।
এ অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হোচিমিন বলেন, এ দেশের মানুষরা এরকমই। এদেশের মানুষের আচার-আচরণ, কথাবার্তা এরকমই। এটা আমি বুঝে গেছি। দেশটা যখন স্বাধীন হয়, যিনি স্বাধীন করেছেন তাকেই মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর তো আর এ জাতিকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
তবে হোচিমিন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পদক্ষেপে খুশি নর্থ সাউথ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী আহসানুর রাফি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হোচিমিন ইসলাম নামক যে বক্তার নর্থ সাউথে বক্তব্য রাখার কথা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক মনে তার বক্তব্য বাতিল করেছেন। শিক্ষার্থীরা গতকাল জুমার নামাজের পর থেকে নর্থ সাউথে তার উপস্থিতি ঠেকাতে অবস্থান নিয়েছিল। সেটি সফল হয়েছে।’’
অবশ্য পরে এ বিষয়ে কথা বলতে আয়োজক দুই প্রতিষ্ঠান হিরোস ফর অল ইনকর্পোরেটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রেহনুমা করিম এবং আই-সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ড. অনন্যা রায়হানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন ও উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
হোচিমিন ইসলাম
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ খসরু মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভালের বক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সবসময় হোচিমিনের পক্ষে ছিলো। উনাকে নিয়ে আসার জন্য সবদিকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে উনার সেশনে আরও যে কয়জন আলোচক ছিলেন; তারাও আসতে না পারায় আয়োজকরা ওই পুরো সেশনটি বাতিল করে দেন।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত দাবি করে অধ্যাপক খসরু মিয়া আরও বলেন, ‘‘বিশ্বদ্যিালয় সব ধরনের মানুষকে শ্রদ্ধা-সম্মানের চোখে দেখেন। এখানে সব ধরনের মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। এখানে কে থার্ড জেন্ডার, কে ট্রান্সজেন্ডার—এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো কোনো আপত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় সবার জন্য উন্মুক্ত।’’