সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের ৫ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হল সুপার

সিটি ইউনিভার্সিটি
সিটি ইউনিভার্সিটি  © সংগৃহীত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সিটি ইউনিভার্সিটির মকবুল হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হলটির সুপার শাহরিয়ার সৈকতের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (১৩ নভেম্বর) থেকে তার আর কোনো ধরনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা তাদের টাকাগুলো ফেরত চান। কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ সত্যি হলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

প্রতি মাসের মতো গেল অক্টোবর মাসের ১০ তারিখে মকবুল হলের প্রভোস্ট ইমরান হোসাইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর আক্তার হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে হলের শিক্ষার্থীদের বকেয়া ও চলতি মাসের ফি পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বকেয়া ও চলতি মাসের ফি তোলার দায়িত্বে ছিলেন হলটির সুপার শাহরিয়ার সৈকত।

হলে শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করে থাকেন। এ ভাড়া হলের দায়িত্বশীলরা তুলে থাকেন। তাদের কেউ যদি এ দায়িত্ব অবহেলা করেন, তাহলে তাদেরকেই এর দায়ভার নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। -উপাচার্য

সিটি ইউনিভার্সিটিতে মোট চারটি হল রয়েছে। দুটি ছেলেদের হল ও বাকি দুটি মেয়েদের। ছেলেদের মোকবুল হোসেন হল এবং মেয়েদের মোনা হল ও ফাতেমা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে। আর ছেলেদের ফজলুর রহমান হল নামে আরেকটি হল ক্যাম্পাসের বাইরে। এ হলগুলোতে মোট প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। এসব শিক্ষার্থীদের সব ফি পরিশোধের জন্য ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংক ও একাউন্টস শাখা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মকবুল হোসেন হলের সুপার পদে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন শাহরিয়ার সৈকত। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই কাজ শুরু করেছিলেন।

মকবুল হোসেন হল

মকবুল হোসেন হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, গেল অক্টোবরে হল প্রশাসনের (চলতি মাস ও বকেয়া) ফি পরিশোধের নোটিশ অনুযায়ী তিনি (শাহরিয়ার সৈকত) তাদের (শিক্ষার্থী) টাকার জন্য প্রেশার করে আসছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি পরিশোধের ব্যাংক, একাউন্টস শাখা ও মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি থাকলেও তিনি টাকা হাতে হাতে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বলেন। একইসঙ্গে নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে কোনো রশিদ ছাড়াই এ টাকা জমা নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলটির এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন ছাত্র। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকবুল হোসেন হলে থেকে ভার্সিটির নিয়মিত ক্লাস করছি। আমাদের এই হলে ভার্সিটির কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত নতুন হল সুপার বকেয়া ও চলতি মাসের সকল ফি উঠিয়েছেন। এরপর সব টাকা নিয়ে হঠাৎ হল থেকে তিনি পালিয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এ টাকার পরিমাণ ৪-৫ লাখ।

‘‘ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অভিযোগ নিয়ে গেলেও তারা এখনো হল সুপারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।’’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও মকবুল হলের প্রভোস্ট ইমরান হোসাইন বলেন, হল ফি পরিশোধের জন্য ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস শাখা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সেটি অনুসরণ না করে হাতে হাতে টাকা দিলেন এবং কোনো রশিদও নিলেন না, সেটা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে তাদের একটা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে।

No photo description available.

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গত ১৭ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর আক্তার হোসাইন বরাবর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সম্প্রতি আমরা মকবুল হোসেন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত হল সুপার শাহরিয়ার সৈকতের হাতে ব্যাপক প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। তিনি গত ৩১ অক্টোবরের আগে টাকা পরিশোধ না করলে হলের সিট ক্যান্সেল করে দেবেন বলে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক আমাদের থেকে টাকা আদায় করে নেন।

এতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত সেই হল সুপার শিক্ষার্থীদের থেকে ১১০০ টাকা থেকে শুরু করে জনপ্রতি ১০ হাজারেরও বেশি টাকা উত্তোলন করে। এমনকি সে অনেক শিক্ষার্থীদের হলে উঠানোর জন্য ২২০০ টাকা করে আদায় করেন। কর্তৃপক্ষ নিয়োগকৃত হল সুপার আমাদের কোন টাকার রশিদ প্রদান করেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টস সেকশনে হলের টাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে জানানো হলেও তিনিও দায়সারা জবাব দেন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা একাউন্টসে টাকা জমা দিতে চাইলেও হল সুপার আমাদের একাউন্টস কিংবা ব্যাংকে টাকা না দিতে প্ররোচিত করেন। হলের ভাড়ায় নিয়োজিত একাউন্টস অফিসার বিষয়টি সম্পর্কে অনেক আগে থেকে অবহিত থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাননি। তার কাছে হল সুপারের টাকা উত্তোলন সম্পর্কে জানানো হলে কিংবা রশিদ চাওয়া হলেও তিনিও আমাদের সহযোগিতা করেননি।

এর আগে, গত ১০ অক্টোবর হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রশাসনের ওই নোটিশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের হল সংক্রান্ত পূর্ববর্তী সকল মাসের বকেয়াসহ চলতি মাসের ভাড়া আগামী ৩০ অক্টোবর মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। যথাসময়ে ফি পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী ৩১ অক্টোবর আইডি ব্লকসহ তাদের নামে বরাদ্দকৃত সিটটি বাতিল হয়ে যাবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখ ফি পরিশোধের শেষ তারিখ বলে নোটিশে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।

মকবুল হলের সুপার সৈকতের কাছে এ টাকা পরিশোধ করা আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি একজন অসহায় সাধারণ শিক্ষার্থী। সিট ক্যান্সেলের ভয়ে অনেক কষ্টে হল ভাড়ার টাকা ব্যবস্থা করে হল সুপারের কাছে ৫৫০০ জমা দিয়েছিলাম। এরকম প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাজার হাজার টাকা হল সুপার জমা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোনো রশিদ দেননি। পরে দেবেন বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর আক্তার হোসাইনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে ফের যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি সমাবর্তন নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে তার কথা বলার সময় নেই।

আমাদের এই হলে ভার্সিটির কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত নতুন হল সুপার বকেয়া ও চলতি মাসের সকল ফি উঠিয়েছেন। এরপর সব টাকা নিয়ে হঠাৎ হল থেকে তিনি পালিয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এ টাকার পরিমাণ ৪-৫ লাখ। -ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী

এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ও মকবুল হলের সুপার শাহরিয়ার সৈকতের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুরে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তার সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। একাধিক মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান বলেন, হলে শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করে থাকেন। এ ভাড়া হলের দায়িত্বশীলরা তুলে থাকেন। তাদের কেউ যদি এ দায়িত্ব অবহেলা করেন, তাহলে তাদেরকেই এর দায়ভার নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ