কী হয়েছে, হচ্ছে ড্যাফোডিলে- শিক্ষার্থীর বয়ানে
এলাকাবাসীর সঙ্গে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির হল থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভয় দিয়ে জানিয়েছে তারা শিক্ষার্থীদের পাশে আছেন।
গত ২৭ অক্টোবর স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম অন্তরের মৃত্যুর পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা করে এলাকাবাসী। সেখানে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে গেল কয়েকদিনের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের পুরো বিবরণ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল সাদিক।
ঘটনা-১
সিটি ইউনিভার্সিটি এবং লোকাল লোকজনের সাথে ঝামেলা নিয়ে মোটামুটি আমরা সবাই জানি। তারা স্থানীয় দাপট দেখানোর জন্য একটা গ্যাঞ্জাম করে। তারপর সেই গ্যাঞ্জামে যেকোনো ভাবে আমরা থেমে গেলেও লোকাল লোকজন থামেনি। তারা আমাদের এক ভাইরে তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে ফেলে রেখে যায়। এর কয়েকদিন পর অন্তর ভাই ট্রিট্মেন্ট চলা অবস্থায় মারা যান।
ঘটনা-২
সহপাঠি বা ভাই মারা যাওয়ায় সবাই ক্ষীপ্ত হয়ে একটা আন্দোলন করে। মিসিল বের করে সুষ্ঠ বিচারের জন্য। এখানে প্রক্টর স্যারের কিছু দায়িত্বহীনতার কারণে তার পদত্যাগের দাবি জানালে তিনি পদত্যাগ করেন। এর সাথে আমাদের স্টুডেন্টদের আরও কিছু দাবি ছিলো।
সবাই দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস পেয়ে যে যার বাসায় চলে গেলে ঠিক রাত ১১টায় লোকাল মাফিয়ারা ৭০-১০০ জন লোক নিয়ে মডেল টাউন এলাকা দিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা করে। এরপর সব হলের স্টুডেন্ট রাস্তায় বের হয়ে তারা পালিয়ে যায়।
ঘটনা-৩
ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার শান্তি সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ৮ দফা দাবি আদায়ে প্রশাসনের সঙ্গে বসেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ভার্সিটি অথোরিটির সাথে শিক্ষার্থীদের মতামতের অমিলে কিছুটা বাকবিতন্ডা হওয়ায় তার ভার্সিটির আশেপাশে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়।
এতে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে যায়। এই ঘটনার সমাধানের লক্ষ্যে ভিসি স্যার সব স্যারদের নিয়ে প্রায় ২-৩ হাজার ছাত্রদের নিয়ে মাঠের সামনে প্রেস ব্রিফিং এবং দাবির আলোচনায় কথা বলতে বসলেন।
ঘটনা-৪
ঠিক এই মুহূর্তে হল-২ থেকে খবর আসলো লোকাল মাফিয়ারা হলের দিকে অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসতেছে। আর মসজিদের মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, সবাই যেন লাঠিসোঠা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছে ড্যাফোডিলের বাস
৪নং ঘটনার পর কিছু আস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। এই আক্রমনের কথা শুনে সবাই উঠে গেলে প্রেস ব্রিফিং নষ্ট হবে। এজন্য সিনিয়র ভাইরা সেখান থেকে হল-২ এর দিকে ২০-২৫ জনকে পাঠায় খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা মাফিয়া এলাকাবাসীরা ওই শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসময় হল-২ এর ১০-১৫ জন ছাড়া কোনো পোলাপান ওই ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তায় এগিয়ে আসেনি।
ওই মাফিয়া গ্যাংদের ধারালো অস্ত্রের মুখে আমাদের কিছু স্টুডেন্ট মাইর খেয়ে স্পট চিতপটাং হয়ে গেলো। আমি সেখানে এক শিক্ষার্থীকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে ত্রিপলি বিল্ডিং-এর কাছে আনতেই দেখি কেন্দ্রীয় মাঠের সব পোলাপান চলে আসছে। আজকে ওই ছেলেরে আমি টেনে না নিয়ে আসলে হয়তো মেজর ইঞ্জরড হতো।
তারপর সবাই একসাথে স্পটে গেলে লোকাল সবাই পালিয়ে যায়। কিন্তু এর আগেই তারা ড্যাফোডিলের আমাদের প্রথমে যাওয়া ওই ২০-২৫ জনের মধ্যে ১০-১৫ জনকে বেধড়ক মারধর করেছে। কিন্তু এখানে আরও একটা ঘটনা আছে, তখন কেন্দ্রীয় মাঠে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় ভিসি স্যারের পাশাপাশি সবার কানে এই আক্রমনের কথা যাওয়ার পরেও ভিসি স্যার পোলাপানেক স্পটে আসতে দেয়নি এই বলে যে ‘প্রেস ব্রিফিং আগে শেষ হোক’।
কেনো? আপনাদের কি বাসায় যেতে হবে সেজন্য? কিন্তু যখন শুনলো ভার্সিটির বিল্ডিং ভাঙচুর করতেছে তখন পোলাপানেক পাঠায়ে দিলো। কেন? ভার্সিটি রক্ষা করার জন্য? আজকে যারা আহত হলো আপনার ভার্সিটির জন্য তাদের কি বাড়ি নেই? মারা গেলে কি আবার সেই অন্তর ভাইয়ের লাশ যেভাবে বাড়িতে পাঠাইলেন সেভাবে তাদের লাশও পাঠাইতেন নাকি?
আপনারা এতো টাকা নিচ্ছেন; বিনিময়ে সেফটি কই? আজ মার খাওয়ার পর আহত অবস্থায় নোটিশ দিয়ে বলে দিচ্ছেন যে বাসায় চলে যাও! ভার্সিটির বাস না হয় আপনি সিএন্ডবি বা ঘাটপাড় পর্যন্ত দিলেন। কিন্তু এই অবরোধের মধ্যে বাকি পথটুকু পোলাপান যাবে কিভাবে?
আপনি এইটুকু সেফটি ইনশিওর করতে পারলেন না? নিজেদের জন্য পুলিশ ডাকতে পারেন; হলের পোলাপানের সেফটির জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ বা আনসারের ব্যবস্থা করতে পারলেন না? লোকাল মাফিয়াদের জন্য রাগ তো আছেই কিন্তু ভার্সিটির সিস্টেম এবং নিরাপত্তা নিয়ে আজ প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে।
ইশ! আপনাদের যদি আজ মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা দেখাইতে পারতাম! আমি নিজেও শেষে এসে পায়ে গ্যাস সিলিন্ডার পরে কিছুটা আহত হয়ে মেডিকেল সেন্টারে গেছিলাম। ঠিক ওই মুহূর্তে মেডিকেল সেন্টারে বাকিদের রক্তের লাল দাগ ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না বিশ্বাস করেন। চোখের সামনে এনএফইর এক ফ্রেশার তাদের হাতে মাইর খাওয়া দেখে ভাবছিলাম এটা স্পট ডেড হয়ে গেছে, কিন্তু পরে শুনলাম বেঁচে আছেন।